কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহের মাঝে পবিত্র খুশির বার্তা নিয়ে আসলেও এবার ঈদের আগের রাতে ও ঈদের দিন সিলেট বিভাগর ৩ জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঈদের আগের রাতে টমটম পার্কিং নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গলের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধুসহ ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। রোববার (৩০ মার্চ) রাত ১টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরের গদারবাজার এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গদারবাজার এলাকায় সাবেক মেয়র মহসিন মধুর বিনা লাভের বাজারের সামনে টমটম পার্কিং নিয়ে মধু গ্রুপ ও বিএনপির নেতা হাজী মুজিবের সমর্থক আনার মিয়া মেম্বারের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনী মাঠে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় শহরে দোকানপাটে আটকেপড়া সাধারণ মানুষের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন- শ্রীমঙ্গলে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুর বিনা লাভের বাজারে হামলার ঘটনায় দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় বেশকিছু টমটমসহ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫৬ রাউন্ড শটগানের ফাঁকাগুলি ছোড়ে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধুসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়।
এদিকে, ঈদের দিন হবিগঞ্জের বাহুবলে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের নামাজের পর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরান মৌড়ি (সরকার দীঘিরপাড়) গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- উপজেলার ৪নং বাহুবল সদর ইউনিয়নের পুরান মৌড়ি গ্রামের তেরা মিয়ার ছেলে তাহির মিয়ার প্রায় তিন শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী আকবর মিয়ার সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয়রা একাধিক বিচার-সালিশে তাদের বিরোধটি নিষ্পত্তি করে দিলেও আবারও দুপক্ষের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়েই বিরোধ দেখা দেয়।
এরই জের ধরে ঈদের নামাজের পর দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আকবর আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (১৭), রুবেল মিয়া (২২), জোছনা বেগম (৪৫), তাহির মিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৩৫), হামিদা বেগমসহ (৪৫) কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করেছে।
আটকরা হলেন- পুরান মৌড়ি গ্রামের রফিক মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া (২৮), ফজর আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া (৩৫) ও হরিতলা গ্রামের হুরাই মিয়ার ছেলে এরশাদ মিয়া (৪৫) ও কনাই মিয়ার ছেলে আব্দুল আলী (৪৮)।
বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষ ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনকে আটক করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
অপরদিকে, ঈদের দিন সিলেটের গোয়াইনঘাটে ঈদের দিনে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের নামাজের পর বেলা ১১টার দিকে উপজেলার লামার দমদমীয়া গ্রামের দুর্ঘামারা বিলের পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার ওই ইউনিয়নের ভিতরগুল ও লামার দমদমীয়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে দুর্ঘামারা বিলের পাড়ের একটি খেলার মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধ নিয়ে উভয় গ্রামের মধ্যে কয়েক দিন ধরে স্থানীয় সালিশ চলছিল। সোমবার ঈদের নামাজ শেষে বেলা ১১টার দিকে দমদমীয়া গ্রামের বিবাহিত ও অবিবাহিত যুবকদের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দমদমীয়া গ্রামের বাসিন্দারা।
অন্যদিকে ভীতরগুল গ্রামের একদল যুবক একই সময়ে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। এ সময় মাঠে ফুটবল খেলতে বাধা দেয় দমদমীয়া গ্রামের কয়েকজন যুবক। এ নিয়ে তর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
পরে আহতদের গোয়াইনঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঈদের দিনে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আহতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।