কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
বয়স হয়েছিলো মাত্র ৩২ বছর। ছিলেন প্রাণচঞ্চল্যে ভরপুর টগবগে এক যুবক। সব মহলেই প্রশংসিত ছিলেন এই কলমযোদ্ধা। কিন্তু তাঁর সব কর্মচাঞ্চল্য থামিয়ে দিলো একটি কালো সন্ধ্যারাত।
২০২১ সালের ৬ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে রেখে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।
মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেলো পুরো পরিবার। আকাশ ভেঙে মাথায় পড়লো সহধর্মিনী সায়েমা সোনিয়ার। পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেলো একমাত্র সন্তান গুঞ্জরের।
শাকির আহদ। জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল সিলেটভিউ’র কুলাউড়া উপজেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। ওই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসজনিত কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার শাকিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাকির মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ির মৃত আব্দুস শহিদের ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি মা, এক শিশুসন্তান ও স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজন রেখে যান।
শাকিরের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে শুধু তাঁর জন্মভূমি কুলাউড়াই নয়, প্রায় পুরো সিলেটে শোকের রব উঠে সেদিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার জন্য অনেকেই শোকাবহ মন্তব্য করেন।
মৃত্যুর পরদিন শাকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছিলো- তাঁর এমন চলে যাওয়া বদলে দিয়েছে কুলাউড়ার বরমচাল এলাকার মাধবপুর গ্রামের দৃশ্যপট। ওই এলাকাসহ পুরো কুলাউড়া শোকে স্তব্ধ।
সেদিন মাধবপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ির ঘরে ঘরে ছিলো কান্নার রোল। এক ঘরের কান্না ছাপিয়ে যাচ্ছে আরেক ঘরকে। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই। সবার চোখেই নিরব অশ্রুর ধারা।
৭ আগস্ট বাদ জোহর উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের মাধবপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাযা শেষে বাবার কবরের পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে শাকিরের লাশ দাফন করা হয়। জানাযার নামাজে উপজেলার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
২০১২ সালে সাপ্তাহিক সীমান্তের ডাক পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন শাকির। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় সুনামের সঙ্গে কাজ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি সিলেটের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ‘সিলেটভিউ২৪ডটকম’র কুলাউড়া উপজেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘নয়া শতাব্দি’র মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শাকির ছিলেন প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল এক সাংবাদিক। এক স্বপ্নচারী যুবক। সদা হাস্যজ্জ্বল টগবগে শাকিরের সুসম্পর্ক ছিলো কুলাউড়া উপজেলার দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে।
শাকিরের বাবা মারা গিয়েছিলেন তার মৃত্যুর এক বছর আগে। পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন শাকির। মা, ২ ভাই, স্ত্রী ও একমাত্র শিশুসন্তান গুঞ্জরকে নিয়েই ছিলো তাঁর দিনাতিপাত। দিনভর ছুটতেন খবরের পেছনে। নিউজের ভাঁজে গেঁথে থাকতো শাকিরের প্রতিভা আর মেধার বিচ্ছুরণ।
মৃত্যুর আগে ৫ বছরের একমাত্র ছেলেসন্তান গুঞ্জরকে নিয়ে ছিলো তাঁর এক আলাদা পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাকিরের বেশিরভাগ পোস্টের মধ্যে থাকতো বাবা-ছেলের খুনসুটির ছবি।