শাপলা চত্বরে আওয়ামী নৃ শং তা র এক যুগ

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক : 

এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ওই দিন রাজধানীজুড়ে হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওই সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হন। তবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় শুধু শাপলা চত্বরে নিহত হন হেফাজতের ৬১ কর্মী।

এই রিপোর্ট প্রকাশ করায় অধিকারের তৎকালীন সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান ও এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করে সরকার। আর হেফাজতের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ ৭টি জেলায় মোট ৫৩টি মামলা দায়ের করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ৪৯টি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

এরপর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় আরেক দফা সংঘর্ষ হয় হেফাজতের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের। সেই ঘটনায় দেশব্যাপী ২২১টি মামলা হয়। সব মিলিয়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মোট মামলা দাঁড়ায় ২৭০টি।

সম্প্রতি এসব মামলার মধ্যে ঢাকায় দায়ের হওয়া ৪৫টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হক। তার দেওয়া তালিকায় আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখার সুপারিশও রয়েছে। 

পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জানান, তারা আবেদনের প্রাথমিক যাচাই শেষে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন। পরে আরও ৬-৭টি মামলা যুক্ত করে দ্বিতীয় দফা তালিকাও জমা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাপ্ত মামলাগুলোর প্রত্যাহারের প্রস্তাব তারা আবার পিপির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী জানিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত ২২০টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আরও ৫০টি মামলা রয়েছে যেগুলোর আবেদন এখনও করা হয়নি।

২০১৩ সালের ঘটনার পর থেকে হেফাজতের বহু শীর্ষ নেতা ও সহস্রাধিক কর্মী গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি হারুন ইজাহার, মাওলানা কামরুদ্দিন, মাওলানা মিজানুর রহমান, শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী প্রমুখ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মী জামিনে মুক্তি পান। তবে এখনো কয়েকজন কারাবন্দী আছেন বলে দাবি করেছেন মামুনুল হক।

গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হেফাজতের মহাসমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, অবিলম্বে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে হেফাজত যা করার, তা-ই করবে।’

একই সমাবেশে মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘শাপলা চত্বরে আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, তার জন্য সরাসরি দায়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নামাজরত ও ঘুমন্ত এতিমদের ওপর যেভাবে গুলি চালানো হয়েছিল, তা ইতিহাসে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। আমরা এর বিচার চাই।’

ট্রাইব্যুনালে মামলা :
২০১৩ সালের ঘটনার ১২ বছর পর, ২০২৫ সালের ১২ মার্চ হেফাজতে ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা (মিস কেস) দায়ের করেছে। মামলায় শেখ হাসিনাসহ নয়জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, পুলিশের সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, বেনজীর আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

এর মধ্যে টুকু, শহীদুল, জিয়াউল আহসান ও মোল্যা নজরুল ইসলাম ইতোমধ্যেই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন। বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।


(মূল রিপোর্ট : বাংলাদেশের খবর)