উগ্র ভারতই প্রথম হামলা চালালো পাকিস্তানে

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

মধ্যরাতে ভারতের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ পাকিস্তানি নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ রয়টার্সকে বলেছেন, ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।

এর আগে, পাকিস্তান দুটি ভারতীয় বিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ৪টায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ছয়টি এলাকায় ২৪টি হামলার কথা জানা গেছে। এসব হামলায় আটজন পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।’

তিনি জানান, বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় সুবহান মসজিদে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে পাঁচজন নিরীহ পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে তিন বছরের মেয়েও রয়েছে। ৩১ বেসামরিক লোক আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ছয়জন নারী।

তিনি আরও জানান, ওই হামলায় একটি মসজিদ ও চারটি ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

আইএসপিআর প্রধান আরও বলেন, মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদে সাতটি হামলার ঘটে। এতে একটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে ও একজন কিশোরী আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, কোটলিতে আব্বাত মসজিদে পাঁচটি হামলা হয়েছে। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। যাদের একজন ১৬ বছরের কিশোরী ও অপরজন ১৮ বছরের তরুণ। এক নারী ও তার মেয়ে আহত হয়েছেন।

আইএসপিআর প্রধান বলেন, ‘মুরিদকেতে উম্মুল কুরা মসজিদে চারটি হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। একটি মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং স্থানীয় কুমারদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘সিয়ালকোট জেলার কোটকি লোহারা গ্রামে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। যার মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ও অপরটি খোলা মাঠে পড়ে। ফলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আর শাকরগরের কাছে দুটি হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু একটি ডিসপেনসারির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।’

এই হামলাকে ‘উসকানিমূলক ও কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা এর উপযুক্ত জবাব দিচ্ছি এবং দিতে থাকব।’

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানায়, পাকিস্তানের বিমান বাহিনী (পিএএফ) মধ্যরাতের চালানো হামলার জবাবে তিনটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছি। এখনো অভিযান চলছে।’ তবে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। একটির অবস্থান পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা ও অন্যটি অধিকৃত কাশ্মীরের আখনুরের কাছে।’

এদিকে স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৪২ মিনিটে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি জানায়, ‘পাকিস্তান বিমান বাহিনী আওয়ান্তিপোরা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৭ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আরেকটি রাফাল যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এই নিয়ে মোট তিনটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে।’

পিটিভি আরও জানায়, ‘ভারতীয় গণমাধ্যম বর্তমানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভুয়া ও সাজানো তথ্য প্রচার করছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি—পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কোনো বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

বুধবার সকাল ১০টা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সকাল ১০টায় জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।

এদিকে, ভারতের এই কাপুরুষোচিত হামলার পর পাকিস্তান তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করেছে।

বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ৪৮ ঘণ্টার জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে একটি নিয়মিত ‘নোটাম’ জারি করা হয়েছে। ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং লাহোর বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

কাতার, দুবাই, বাহরাইন, কুয়েত ও রিয়াদগামী অন্তত ২৫টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

ভারত সরকার জানিয়েছে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসী অবকাঠামো। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখান থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানে মোট নয়টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমাদের পদক্ষেপগুলো ছিল লক্ষ্যভিত্তিক, পরিমিত ও উত্তেজনা না বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। টার্গেট নির্বাচনে ও হামলা পরিচালনায় ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।’

গত মাসে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর এই অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।