‘এক বছরেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান হয়নি’

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এক বছরেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করা যায়নি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। কারণ, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। মূলত, এক-এগারো থেকেই আমাদের রাষ্ট্রে এ অপশক্তির সূচনা হয়েছিল।

রবিবার (৩ আগস্ট) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দলের গণজমায়েত ও ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গণজমায়েতে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। মূল আনুষ্ঠানিকতা বিকাল ৪টায় শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শহীদ মিনারে সমবেত হন তারা। এ সময় স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল।

নাহিদ বলেন, এক বছর আগে এই শহীদ মিনার থেকে একদফা ঘোষণার পর থেকেই স্বৈরাচারের পতনের জন্য দেশের মানুষ রাজপথে নেমেছিল। এ এক দফা কোনও ব্যক্তি বা দলের ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশের আপামর জনগণ ও শহীদদের।

তিনি বলেন, সে সময় আমরা প্রথমে  ৯ দফা দিয়েছিলাম। আমরা জানতাম, সেই খুনি সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তাই দায় ও দরদের রাজনীতি থেকে আমরা এক দফা দিয়েছিলাম। আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র হবে। কিন্তু এক বছরেও আমরা পারিনি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করতে। আমাদের মৌলিক কাঠামো সংস্কার করতে পারিনি। সেনাবাহিনীতে সংস্কার করতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমরা একটি শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। যেখানে থাকবে না গুম-খুন ও দুর্নীতি। মানুষ ন্যায্য অধিকার পাবে। ধর্ম ও জাতিগত বিভেদ থাকবে না।

এ লক্ষ্যেই অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশের বন্দোবস্তের স্বপ্ন নিয়ে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গঠন করেছি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

নাহিদ বলেন, গত এক বছরে আমরা মানুষের পক্ষে কাজ করেছি।  শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।

বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের পক্ষে কথা বলছি।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে আমাদের ওপর মুজিববাদী সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাঙালি চেতনার নামে করা এ সংবিধান মানুষকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায্যতা চাই।

নাহিদ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ঐক্যের ডাক দেন। তিনি শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।

গণজমায়েতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  যাত্রাবাড়ীতে শহীদ ইমাম হাসান তাইমের বড় ভাই রবিউল হাসান। এছাড়াও বিভিন্ন শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি ও আহত জুলাইযোদ্ধারাও মঞ্চে বসেছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বড় কর্মসূচিতে বন্ধুপ্রতিম দলগুলোর প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। কিন্তু এনসিপির আজকের কর্মসূচিতে ভিন্ন দলের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। এমন কাউকে এনসিপির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিনা জানা যায়নি।

এনসিপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী  দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদিব, ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদ সারোয়ার নিভা, অনিক রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের সমন্বয়কারী হাফেজ আকরাম হুসেইন, দক্ষিণের আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।