এম এ মান্নানকে দুদক’র জিজ্ঞাসাবাদ

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রভাবশালী পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানকে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়, সিলেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। ওইদিন সকালে সিলেট দুদক কার্যালয়ে তাকে দুই ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এম এ মান্নান সিলেট দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে হন।

সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, সহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে কমিশন ও ঘুষ গ্রহণ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম ও আত্মীয়স্বজনের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তাঁর গ্রামের বাড়ির বেশির ভাগ অংশ সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রয়ের বিষয়েও জানতে চান দুদক কর্মকর্তারা। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাত বলেন, ‘মান্নানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ রয়েছে, এই অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তের জন্য তাকে দুদক সিলেট কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ এবং সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার ভাগনে, ভাতিজাসহ আরও অনেকেই জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটির প্রাথমিক পর্যায়ের তদন্ত চলছে।’

সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এ বিষেয়ে বলেন- একমাস আগেই দুদকের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আমার কাছে বিভিন্ন তথ্য চেয়েছেন। আমি বৃহস্পতিবার সিলেট অফিসে গিয়ে যা যা সম্ভব তথ্য দিয়েছি। দুদক আরও কিছু কাগজপত্র চেয়েছেন। আমি বলেছি- আমার ঢাকার ফ্লাটে লুটপাট হয়েছে। সংসদ ভবনের অফিস লুট হয়েছে। আমি অসুস্থ, ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমার কোনো লোক নেই। স্ত্রী-সন্তানরা দেশের বাইরে, থেরাপির জন্যও একা যেতে হয়। আমি কোনদিন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কমিশন নেইনি। গ্রামের বাড়ি সরকারকে দিয়ে টাকা নিয়েছি, এই তথ্য থাকলে, তারাই বের করতে পারবেন। আমার ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে আগেও ব্যবসা করতো, তারা কোন অনিয়ম করে থাকলে, সেটিও বের করতে পারবেন তারা। আমি আগেও সত্য বলেছি, এখনো যা সত্য তা বলবো।

উল্লেখ্য, চব্বিশের ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ পৌরশহরে গণঅভ্যুত্থানকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামের হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় এম এ মান্নানকে শান্তিগঞ্জের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কারাগারে থাকা অবস্থায় পাঁচ অক্টোবর সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন মান্নান। এসময় সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হেমায়েত উদ্দিন তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরদিন (১০ অক্টোবর) হাসপাতাল থেকেই মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। এরপর থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় ছিলেন তিনি।

এম এ মান্নান প্রোস্টেটসহ নানা রোগে ভুগছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তিনি শান্তিগঞ্জের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বাড়িতে তিনি ছাড়া পরিবারের আর কেউ থাকেন না।