‘সিলেটে যে হাওর এখনো আওয়ামী ডেভিলদের দখলে’

  • সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ধর্মগ্রাম হাওরটি এখনো আওয়ামী ডেভিলর জবরদখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ধর্ম গ্রামের তজম্মুল আলীর ছেলে মোহাম্মদ সালেহ রাজা। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন-  ‘আমাদের এলাকায় একটি হাওর আছে নাম ধর্মগ্রাম হাওর। অন্তত চারটি গ্রামের মানুষ এই হাওর থেকে নানাভাবে উপকারভোগী। গ্রামগুলো হচ্ছে- লান্দু, কুরিহাই, ধর্মগ্রাম ও খলাগ্রাম। গ্রামগুলোর মানুষ অসহায় দরিদ্র। এই হাওরের উপর নির্ভর করে তাদের জীবন-জীবিকা। গরু মহিষের চারণ ভূমি, মাছ ধরে খাওয়া ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা। গত পাঁচশ' বছর ধরে এভাবেই চলছিল।
কিন্তু গত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রামের শুক্কুর আলী নামের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। হাওর থেকে শন কুড়িয়ে একসময় যার জীবন চলতো- সেই শুক্কুর আলী ছোট্ট একটা দোকান দিলেন। গড়ে তুললেন একটা নৌকা সমিতি। তবে এ সমিতির সদস্য হতে হলে আগে নৌকার ভোটার কি না তা নিশ্চিত হতে হতো। সমিতির কোষাধ্যক্ষ শুক্কুর আলী। এখান থেকেই তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হন। স্থানীয়  আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বাড়তে থাকে তার অপরাধ কমকাণ্ড। আওয়ামী আমলে যেকোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কালো টাকার বস্তা চলে আসতো শুক্কুর আলীর দোকানে। এসব টাকায় তিনি বড় দোকানের মালিক হন এবং নিজের একটা লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তুলেন। এই বাহিনী এখনো বহাল তবিয়তে আছে এবং এলাকার সাধারণ মানুষকে নানাভাবে নির্যাতন করছে। এই বাহিনীর সদস্যরা হলেন- শুকুরের আপন ভাই মোহাম্মদ এখলাছ, মো. রহিম উদ্দিন, মো. সিরাজ, মো. রিয়াজ, মো. সামছুর উদ্দিন, আলীম উদ্দিন, মো. দেলোয়ার, মো. সেলিম, মো. শরীফ, মো. বাবুল হোসেন মনির, মো. জয়রুদ্দিন, মো. মনির আহমদ, মো. জালাল এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. জসিম। এরা আওয়ামী লীগের সময়ে যেমন ক্ষমতার দাপট দেখাতো, এখনো দেখাচ্ছে।’

মোহাম্মদ সালেহ রাজা আরও বলেন- ‘গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর শুক্কুর আলীর নজর পড়ে ধর্মগ্রাম হাওরের উপর। সরকার হাওরের জায়গায় কেনাবেচা বন্ধ রাখলেও, শুক্কুর আলী কিভাবে কি করে, কিছু গরীব মানুষকে, পাঁচ/দশ হাজার টাকা করে দিয়ে রেজিস্ট্রার করে নিয়েছে কিছু জায়গা যার পরিমাণ অনুমান একশত ভাগের মধ্যে এক ভাগও নেই বলেই চলে তারা নয় হাজার নয়শ' শতাংশের মত চাষবাস করতে থাকে। আমি তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তারা মিথ্যা চাঁদাবাজীর মামলা দেয় এবং আমি গ্রেফতার হই। তার আগে শুক্কুর আলীর লোকজন বারহাল বাজারের আমার দোকান লুটপাট এবং আমাকে মারধোর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এলাকার লোকজন আমার পক্ষে মানববন্ধন ও নানামুখী প্রতিবাদ জানালে পাঁচদিন জেল খেটে আমি বেরিয়ে আসি। তখন জানতে পারি কোন এক বিশেষ ইসলামি দলের উপজেলা আমির এর সুপারিশে এবং বড়ো অংকের টাকার বিনিময়ে, আমাকে জেলে পাটানো হয়েছিল। আজ আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, যে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরেও কি আমরা ডেভিলদের হাতে নির্যাতিত হবো? হাওরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণে আমি উচ্চ আদালতে একটি রিট নং-৮০৭৬/২০২৫ইং দায়ের করেছিলাম। গত ১৩ জুলাই আদালত বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তদন্ত শুরু না হওয়ায় আমি গত ১২ আগস্ট মাননীয় জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করি। এ প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট সচিব, ইউএনও, এসিল্যাণ্ড ও তহসিলদার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সামনেই দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি ধমকি দিলে কিছু না বলেই তারা ফিরে যান। দখলদারি ও হাওরের পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস চলতেই থাকে। দু'দিন আগে শুক্কুর ও তার লোকজন নিরীহ মানুষকে হাওরে গরু চরাতে নিষেধ করেছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেনা। সবাই সন্ত্রস্ত তারা সরকারি সম্পদ গ্রাস করে ফেলছে।’

মোহাম্মদ সালেহ রাজা সিলেটের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকের প্রত্যাশা রেখে বলেন- ‘তিনি একজন সৎ ও বিচক্ষণ মানুষ। সিলেটে যোগদানের পর লুন্টিত সাদাপাথর উদ্ধারে তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। আমার এলাকার ৪টি গ্রামবাসীর পক্ষে আমি উনার প্রতি আহ্বান জানাই, ধর্মগ্রাম হাওরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে আওয়ামী ডেভিলদের হাত থেকে হাওর এবং এলাকাবাসীকে রক্ষা করুন। সেই সাথে আমি পুলিশ র‍্যাব এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনকে আদালতের নির্দেশ মেনে আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের আহ্বান জানাই।’