সিকৃবি ছাত্রদলের কমিটিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ!

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কমিটিতে অছাত্র, চাকরিজীবি ও বিবাহিতের পাশাপাশি রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতারা রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে ছাত্রলীগ পুনর্বাসন কেন্দ্র বলে অভিহিত করেছেন।

জানা গেছে, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও গত ১৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির ৪৫ সদস্যের সিকৃবি ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। কমিটিতে ২৫ জনকে যুগ্ম আহবায়ক এবং ১৮ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। নবঘোষিত কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডিন কাউন্সিলের জরুরি সভার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ আগস্ট সিকৃবিতে সবধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, রাজনীতি, র‌্যাগিং ও বুলিং নিষিদ্ধ করা হয়। কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী রাজনৈতিক সংগঠন ও কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তখন জানানো হয়েছিল। যা এখনো বলবৎ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবগঠিত কমিটিতে ভেটেরিনারি, এনিমেল অ্যান্ড বায়োমেটিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানাউল হোসেনকে আহবায়ক এবং কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহান তালুকদারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তাদের দুজনেই চাকুরিজীবী। আহবায়ক সানাউল হোসেন বিবাহিত এবং সদস্য সচিব সোহান তালুকদারের ছাত্রত্ব নেই। হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসে সদস্য সচিব পদ বাগিয়ে নেন সোহান।

ছাত্রদল করলেও ১নং যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন অছাত্র, ২নং যুগ্ম আহবায়ক মো আবু সাইদ রবি ও ৭নং যুগ্ম আহবায়ক মহিউদ্দিন তারেক বিবাহিত এবং ১নং সদস্য আশরাফুল ইসলাম বিবাহিত, অছাত্র এবং চাকরিজীবী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিকৃবি ছাত্রদলের নব গঠিত কমিটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনেক সক্রিয় নেতাকর্মীরা ঠাঁই পেয়েছে। কমিটির ৩নং যুগ্ম আহবায়ক গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগ নেতা এবং অছাত্র। তিনি ফ্যাসিস্ট ভিসি প্রফেসর জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। ৪নং যুগ্ম আহবায়ক বাফিল আহমেদ অরিত্র যিনি ছাত্রলীগসহ ফ্যাসিবাদী অঙ্গসংগঠন আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান (আমুস) এর কোষাধ্যক্ষ ও কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহ-প্রচার সম্পাদক। এছাড়া সে ৫ আগস্ট পরবর্তী ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনের অন্যতম কুশীলব ছিলো। বর্তমানে ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোমধ্যে বাফিল আহমেদ অরিত্রের অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রয়েছে।

বাফিল আহমেদ অরিত্র এ বিষয়ে বলেন, ৫ আগস্ট পরে ক্যাম্পাসে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। বাহির তার লোকজন এসে অস্ত্রশস্ত্র সহ মহড়া দিচ্ছিল। এটার জন্য আমরা হল থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ চাইছি।

কমিটির ১২নং যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান রতন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের স্লোগান মাস্টার হিসেবে পরিচিত। ৫নং যুগ্ম আহবায়ক ফাহাদ ভূঁইয়া, ৮নং যুগ্ম আহবায়ক জাহিদ হাসান ফাহাদ, ২০ নং যুগ্ম আহবায়ক মো. নাঈম ইসলাম, ১০নং যুগ্ম আহবায়ক মো. শাফিউল করিম, ২৪নং যুগ্ম আহবায়ক মো. অমি, ১৩নং যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রাকিব সকলেই ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে সক্রিয় ছিল। এছাড়া ১৬নং যুগ্ম আহবায়ক আবির রায়হান আকাশ পতিত আওয়ামী মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্বাচনী প্রচারণার মূল ভূমিকা পালনকারী ছিলেন। ১৭নং যুগ্ম আহবায়ক সালাউদ্দিন, ২৩নং যুগ্ম আহবায়ক মেসবাহুর রহমান, ৩নং সদস্য রাব্বু প্রামানিক, ৭নং সদস্য তাহসিন আহমেদ সিফাত, ১০নং সদস্য সাদিকুল ইসলাম, ৭নং সদস্য মেহেদী হাসান, ১২নং সদস্য রাজেশ বাছাড়, ৫নং সদস্য সাইমুন ইসলামসহ কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এদিকে, আহবায়ক ও সদস্য সচিব দুইজন চাকরিজীবী হওয়াতে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব সোহান তালুকদারকে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন, পরে কল দিবেন বলে কেটে দেন।

এ ব্যাপারে সিকৃবি ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সানাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, কমিটি গঠনের পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ খুশী হতে না পেরে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। দেশে একটা সময় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে অনিহা ছিল। তখন অনেকেই ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিষোধাগার করেছে। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ছাত্ররা ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। ছাত্রলীগের পদধারি কেউ কমিটিতে স্থান পায়নি। অনেকেই সেই সময় বন্ধু বান্ধব হিসেবে ছাত্রলীগের ছেলেদের সাথে ছবি তুলে থাকতে পারে। আবার অনেকের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড বিএনপি ক্যাম্পাসে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে থাকতে পারে। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের একজন ঠাই পেয়েছে। তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।

তিনি আরও বলেন, একদিনে কমিটি হয়নি। এর আগে কর্মীসভা হয়েছে। সিভি আহ্বান করা হয়েছে। কেন্দ্র এসব সিভি যাছাই বাছাই করেছে। এরপর কমিটি ঘোষণা করেছে। কমিটির দুয়েকজনকে নিয়ে বিতর্ক আছে। এগুলো কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিবে।

(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)