সিলেটে ৪ ঘণ্টায় ৫ লা শ!

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেট বিভাগের ৩ উপজেলায় ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৫ জনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন শিশু। এই ৩ শিশু ও আরও একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

আর আরেকজনের লাশ পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। 

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে এ ৫জন লাশ হয়েছেন। 

জানা গেছে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোন ছিলেন। বুধবার  দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের পাঞ্জারাই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন- পাঞ্জারাই গ্রামের রতীশ সরকারের ছেলে শ্রাবন সরকার (৩), জগাই সরকারের ছেলে শুভ সরকার (৪) এবং নোয়াগাঁও গ্রামের ব্রজলাল সরকারের মেয়ে অহনা সরকার (৫)। শ্রাবন ও শুভ চাচাতো ভাই, আর অহনা তাদের ফুফাতো বোন। তারা নবীগঞ্জ পৌর এলাকার জয়নগরে বসবাস করতো। পাঞ্জারাই গ্রামে বেড়াতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।

নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়- দুপুরে বাড়ির আঙিনায় খেলা করার এক পর্যায়ে একটি শিশু বাড়ির পুকুরে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে বাকী দুজনও পানিতে পড়ে যায়। প্রথমে বিষয়টি কেউ বুঝতে পারেননি। পরে দুপুর দেড়টার দিকে গ্রামের এক মহিলা পানিতে ভাসতে থাকা অহনাকে দেখতে পান। এরপর খোঁজাখুঁজি করে পুকুর থেকে শ্রাবন, শুভ ও অহনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের দ্রুত নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. চম্পক কিশোর সাহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। 

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান ৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় পুকুরে গোসল করতে গিয়ে শাকুল মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। 

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের পূর্ব রংগীরকুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাকুল মিয়া একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি প্রতিদিনের মতো সকালে পাশের বাড়ির বাবুল মিয়ার পুকুরে গোসল করতে যান। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও তিনি আর ফিরে না আসায় পরিবার ও প্রতিবেশীরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পুকুর পাড়ে তার জুতা ও জামাকাপড় রেখে যাওয়া দেখে সন্দেহ হলে স্থানীয়রা পুকুরে তল্লাশি শুরু করেন এবং কিছুক্ষণ পর পানির নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে তাদের পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা মরদেহ উদ্ধার করে ফেলেন।

পূর্ব রংগীরকুল পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী জানান, ‘শাকুল মিয়া সাঁতার জানতেন না, তবুও তিনি প্রায়ই ওই পুকুরে গোসল করতেন।’

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস মিয়া বলেন- ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছাই। তবে স্থানীয়রা ইতোমধ্যে মরদেহ উদ্ধার করেছেন।’

এছাড়া বুধবার সকাল ১০টার দিকে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে জুড়ী-ফুলতলা সড়কের রত্না চা বাগান এলাকায় সড়কের পাশ থেকে জমির মিয়া উরফে মস্তান (২৮) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জমির মিয়া উরফে মস্তান উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের প্রথম ছেলে।

জানা যায়, জমির এক সময় ভালো ক্রিকেটার ছিল। সে টাইলস মিস্ত্রীর কাজ করত। কয়েক বছর থেকে অজ্ঞাত কারনে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং দিন রাত রাস্তায় রাস্তায় ভবঘুরের মত ঘুরতে থাকে। বুধবার সকালে জুড়ী-ফুলতলা সড়কের রত্না চা বাগান জীবনজ্যোতি মাজার এলাকায় সড়কের পাশে একটি লাশ দেখতে পেয়ে পথচারীরা ফেসবুকে প্রচার করলে স্বজনরা জমিরের লাশ সনাক্ত করেন। খবর পেয়ে জুড়ী থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

জমিরের মা ও ভাই আব্দুল মজিদ জানান, রাতে জমির বাড়িতে ছিল। কয়েকবার বলেছে জীবনজ্যোতি মাজারে যাবে। ফজরের পর সে বাড়ি থেকে বের হয়। সকালে লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা গিয়ে সনাক্ত করি। তবে মৃত্যুটি স্বাভাবিক না দুর্ঘটনা জনিত না হত্যা তা বলতে পারব না।

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে তদন্ত চলছে।’