কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বিষাক্ত অ্যালকোহল পান করার পর ছয়জন শ্রমজীবী মারা গেছেন। গুরুতর অবস্থায় আরও তিনজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নিহতরা সবাই একই এলাকার নিম্নআয়ের শ্রমজীবী।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় নয়জন শ্রমিক একসঙ্গে অ্যালকোহল পান করেন। এরপর দুই দিনের মধ্যে পাঁচজন মারা গেলেও পরিবারগুলো বিষয়টি গোপন রাখে।
রোববার (১২ অক্টোবর) হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
স্থানীয়রা জানান, রাতে কয়েকজন শ্রমিক ডিঙ্গেদহ বাজারে একত্র হয়ে অ্যালকোহল পান করেন। এরপর বাড়ি ফেরার পর সবাই পেটের ব্যথা ও অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন। পরিবারকে তারা ‘গ্যাস’ বা পেটব্যথার কথা বলে বিষয়টি গোপন রাখেন।
নিহতদের মধ্যে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার নফরকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক খেদের আলী (৪০) ও খেজুরা গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম (৪০) মারা যান। একই দিন পিরোজখালি গ্রামের মোহাম্মদ লাল্টু ওরফে রিপু (৩০) ও বিকেলে শংকরচন্দ্র গ্রামের মোহাম্মদ শহীদ মোল্লা (৪৫) প্রাণ হারান। তাদের দাফন স্থানীয় গ্রামে সম্পন্ন হয়।
রোববার সন্ধ্যায় শ্রমিক সরদার ও ডিঙ্গেদহ এশিয়া বিস্কুট ফ্যাক্টরিপাড়ার আফজেল আলীর ছেলে মোহাম্মদ লাল্টু (৫২) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করার পর তিনি অ্যালকোহল পান করার বিষয়টি স্বীকার করেন। একই রাতে তিনি মারা যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিঙ্গেদহ গ্রামের টাওয়ারপাড়ার মোহাম্মদ সমির (৫৫) নিজ বাড়িতে মারা যান।
রোববার দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত আরও একজন সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে ও একজন পলাতক আছেন।
নিহত সমিরের ছেলে সুজন আলী বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি একা নন, আরও পাঁচজন একইভাবে মারা গেছেন। সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করি, কিন্তু বাড়িতে আনার পরই তিনি মারা যান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ডিঙ্গেদহ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দেশি মদ বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইমরান বলেন, ‘এ এলাকায় নেশার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে জড়াচ্ছে। প্রশাসন আগে ব্যবস্থা নিলে এত বড় বিপর্যয় ঘটত না।’
অ্যালকোহল পানে অসুস্থ আলিম উদ্দীন বলেন, ‘লেবার সরদার লাল্টু অ্যালকোহল এনেছিলেন। শুক্রবার রাতে আমরা কয়েকজন একসঙ্গে খেয়েছিলাম।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, ‘রোববার বিকেলে লাল্টু মিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরিবার জানায়, তিনি দুই দিন আগে অ্যালকোহল পান করেছিলেন। ভর্তি হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। এর আগে আলিম উদ্দীন নামের আরেকজন ভর্তি হয়েছেন। তিনি বর্তমানে স্থিতিশীল।’
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে তারা অ্যালকোহল পান করেছেন। এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। তিনজন অসুস্থ। এ স্পিরিট কোথা থেকে এসেছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’