সিলেটে হচ্ছে না কথিত আহলে হাদিসের কনফারেন্স

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

আলেম-সমাজ ও তাওহিদি জনতার প্রতিরোধের মুখে এবারও সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে কনফারেন্স করতে পারছেন না কথিত আহলে হাদিস গোষ্ঠী। 

এ বিষয়ে তারা সিলেটের আলেম-সমাজের একাংশকে দোষারূপ করছে। 

আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে ‘সিরাতুল মুসতাকিম কনফারেন্স’র আয়োজন করতে যাচ্ছিলো মহানগরের কুমারপাড়াস্থ ‘আত-তাক্বওয়া মাসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার’ কর্তৃপক্ষ। তবে বাধার মুখে তারা কনফারেন্স আলিয়া মাঠের পরিবর্তে ‘আত-তাক্বওয়া মাসজিদ’ প্রাঙ্গনেই আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাদের সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ‘আত-তাক্বওয়া মাসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার’র মুতাওয়াল্লি আব্দুছ ছবুর চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- আলিয়া মাদরাসা মাঠে তাদের ৭ম ‘সিরাতুল মুসতাকিম কনফারেন্স’ আয়োজনের জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) বরাবরে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ‘উলামা পরিষদ’র বাধা ও প্রতিবাদের মুখে পুলিশ বাইরে কনফারেন্স আয়োজনের অনুমতি দেয়নি। ফলে সিলেটের ‘শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে’ কর্তৃপক্ষ ‘আত-তাক্বওয়া মাসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার’ প্রাঙ্গনেই দুদিনব্যাপী এই কফারেন্স করবেন।

কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের স্কলাররা আলোচনা করবেন উল্লেখ করে মুতাওয়াল্লি আব্দুছ ছবুর বলেন- সিলেটবাসীর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনারা আমাদের কনফারেন্সে এসে কথাগুলো শুনুন। আলেমরাও এসে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিন, আমরা নিজেদের ‘শুধরে’ নেবো।

‘আত-তাক্বওয়া মাসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার’ কর্তৃপক্ষের বর্তমান সময়ের আহলে হাদিস অনুগামীতা ও সিলেটের পরিচালিত তাদের নানা কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আব্দুছ ছবুর চৌধুরী ও মাসজিদ কমিটির সেক্রেটারি কালাম আহমদ চৌধুরী।

উল্লেখ্য,  ইসলাম ধর্ম চর্চা ও প্রচারের নামে বিতর্ক সৃষ্টি করা কথিত আহলে হাদিস গোষ্ঠী সিলেটকে আবারও অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে বলে বক্তব্য ছিলো আলেম-সমাজের। গত ৪ জানুয়ারি বিতর্কিত এই দল সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে সমাবেশ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু সিলেটের আলেম-সমাজ প্রতিবাদী হয়ে উঠায় প্রশাসন ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এছাড়া সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকায় আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ও মাদরাসা মাঠ বরাদ্দ-সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত নোটিশে সেটি বাতিল করা হয়।

পরে নির্ধারিত তারিখে সিলেটে আহলে হাদিস নামধারীদের কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রস্থল মহানগরের কুমারপাড়ার আত-ত্বাকওয়া মসজিদে সমাবেশ করে তারা। তবে এর আগে ওই দিন জুমআর নামাজের পর মসজিদের সামনে তারা মানববন্ধন করে প্রকাশ্যে সিলেটের আলেম-সমাজ ও প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে।

এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে মহানগরের চৌহাট্টা পয়েন্টে নির্মাণাধীন স্তম্ভে কথিত আহলে হাদিস গোষ্ঠীর ‘সিরাতুল মুসতক্বিম কনফারেন্স-২০২৫’র পোস্টার সাঁটানো দেখা যাচ্ছিলো। বিষয়টি নজরে আসার পর ফের ফুঁসে উঠেন সিলেটের আলেম-সমাজ। 

আলেমরা বলেন- গত ১৫ বছর ফ্যাসবাদি হাসিনার নির্যাতনে পরক্ষ-প্রত্যক্ষ মদদ ও সায় দেওয়া কথিত আহলে হাদিস গোষ্ঠী আবারও শান্ত সিলেটকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। গত মাসেই যেখানে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে প্রশাসন তাদের সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়নি, সেখানে আবার ‘সিরাতুল মুসতক্বিম কনফারেন্স’র নামে তাদের পেশিশক্তি প্রদর্শন সিলেটের আলেম-সমাজ কিছুতেই মেনে নেবে না। যে কোনো মূল্যে তাদের অপতৎপরতা রুখে দেওয়া হবে। 

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কথিত আহলে হাদিসরাই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে।

এদিকে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আলিয়া মাঠে এ কনফারেন্স করতে অনুমতি না দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন আলেম-সমাজ। 

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদের অন্যতম সমন্বয়ক, হযরত শাহজালাল রাহ. তাওহিদি কাফেলার সদস্যসচিব ও জামিয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার-এর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ কওমি কণ্ঠকে বলেন- কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই ফিতনাবাজ আহলে হাদিসের সমাবেশে বাতিল করা হয়েছে সেজন্য প্রথমেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি আমরা  পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসকে তারা বার বার সমুন্নত করছেন।

তিনি বলেন- একটি বিষয় আরেকবার প্রমাণিত হলো; সিলেটের আলেম-সমাজ ঐক্যবদ্ধ। বাতিল ফেরকার যে কোনো কর্মকাণ্ড রুখে দিতে সদা সোচ্চার আমরা। আগামীতে ফিতনাবাজ আহলে হাদিস সম্প্রদায় এমন কোনো তৎপরতা দেখালে সেটিও রুখে দেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ।