বড়লেখায় তরুণ-তরুণীদের হেনস্তা, গ্রেফতার ৩

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) :

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় টেস্টি ট্রিট নামে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে চার তরুণ-তরুণীকে আটকে হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ফাস্ট ফুডের দোকানেও ভাঙচুর করা হয়েছে।

বুধবার রাতে বড়লেখা পৌরশহরে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী এক তরুণীর করা মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ তিনজন হলেন- উপজেলার মুছেগুল গ্রামের আহমদ মোস্তফা তোফায়েল, দোহালিয়া গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম আদিল ও বড়থল গ্রামের নাইম আহমদ।

এদিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের এই ঘটনার তথ্য দিতে গড়ি-মসি করার অভযোগ উঠেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে। এতে সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার সনাতন ধর্মালম্বী দুই তরুণ তাদের পূর্বপরিচিত প্রাইমারি স্কুলের দুই মুসলিম সহপাঠী তরুণীর সাথে বুধবার রাতে বড়লেখা পৌরশহরের টেস্টি ট্রিট ফাস্ট ফুডের দোকানে ফাস্টফুড খেতে যান। খাবার শেষে তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন যুবক তাদের আটক করে। এসময় তারা দুই তরুণকে ইসকন সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটিয়ে ভিডিয়ো ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন রেস্টুরেন্টে জড়ো হন। একপর্যায়ে ওই তরুণ-তরুণীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। খবর পেয়ে বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ওই তরুণ-তরুণীকে থানায় নিয়ে আসার পর উত্তেজিত লোকজন ফাস্ট ফুডের দোকানে ভাঙচুর করে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার  ভুক্তভোগী এক তরুণী ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেন।

স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য কিছু উশৃঙ্খল যুবক তরুণ-তরুণীদের আটক করে তাদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে চরম অন্যায় কাজ করেছে। তারা ভিডিয়ো করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সামাজিকভাবে অপদস্ত করেছে। যা কোনো সভ্য নাগরিক করতে পারে না। কেউ কোনো দোষ করলে আইন আছে। তার পরিবার আছে। তারা বিষয়টা দেখবে। কিন্তু কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেনা।

এ বিষয়ে জানতে টেস্টি ট্রিট ফাস্ট ফুড কর্তৃপক্ষের মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিকরা বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। যার কারণে তার বক্তব্য জানা যায়নি। 

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, যেকোনো ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার তথ্য জানতে সাংবাদিকরা ওসিকে ফোন দেন। এবং ওসি সেই তথ্য গণমাধ্যমকে দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আজকে বড়লেখায় ঘটে যাওয়া এত বড় একটি ঘটনার তথ্য দিতে পুলিশ রীতিমতো ঘড়িমসি করেছে। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য থানার ওসি আবুল কাশেম সরকারকে স্থানীয় সাংবাদিকরা একাধিকবার কল করলেও ওসি ফোন ধরেননি। এতে তিনি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে কর্তব্যের প্রতি তার অবহেলার বিষয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।