কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
প্রায়ে দেড় যুগে ভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন দেশবাসী। স্বৈরাচারমুক্ত সময়ে তাই এবারের ঈদের আনন্দে ভাসছেন সারা দেশের মানুষ।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এক মাস রোজা পালন শেষে আজ জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শুরু করেছেন ঈদ উদযাপন। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশের মুসলমানরা পালন করছেন এবারের ঈদুল ফিতর।
ধনী-গরিব এক কাতারে দাঁড়ানো, আনন্দে ভেসে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনই পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর এভাবেই ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে পুরো দেশজুড়েই।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব ঘিরে মুমিন হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের ঢেউ। কারণ ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি ভাগাভাগি করা। ঈদ মানে আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শাণিত করা।
রমজান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। মুসলমানরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ এবং পরকালের জীবনকে সমৃদ্ধ করেন। পার্থিব জীবনে মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাহে রমজান শেষে খুশির ঈদ। কারণ এই ঈদ ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে। ঈদ ধর্মীয় উৎসব হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান।
ঈদ উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ও মোকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
ঈদ জামাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ নামাজ আদায় করেন। একইভাবে ঢাকায় বিভিন্ন এলাকাসহ সারা দেশের মসজিদে, ঈদগাহে ঈদের জামাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সকলকে আনন্দময় ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। আশা করি ঈদের সময়, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের বাড়িতে যেতে পারবেন এবং আপনাদের পরিবারের সাথে আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করবেন।’
তিনি দেশের জনগণকে তাদের আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করার, দরিদ্র পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার এবং তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস বলেন, আপনার সন্তানদের আত্মীয়স্বজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন- এটাই আমার ইচ্ছা। এছাড়াও তিনি ঈদের নামাজের সময় যেকোনো মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পরাজিত শক্তির সব উসকানির মুখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় থাকার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রার্থনা করেন, সকলের জীবন অর্থপূর্ণ ও আনন্দে ভরে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সাহায্য করবেন।
অন্যদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
তাছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ জামাত শেষে সকাল ৯টায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হয়। ঈদ মিছিলটি পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। ঈদ মিছিলটি ছিল বর্ণাঢ্য। মিছিলের সামনে শাহী ঘোড়া ও সামনে-পেছনে ২০টির মতো ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ব্যান্ড পার্টি সুলতানি-মোঘল আমলের ইতিহাস সম্বলিত চিত্রকলাও ছিল। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
এদিকে, লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগমে সিলেটে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাআত অনুষ্ঠিত হয়েছে শাহী ঈদগাহে। সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত জামাআতে ইমামতি করেন সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুশতাক আহমদ খাঁন।
এর আগে নসিহত পেশ করেন একই মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা কামাল উদ্দিন।
এছাড়া নামাজের খুতবা প্রদান ও নামাজ শেষে মুনাজাত পরিচালনা করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক (বরুণী)।
মুনাজাতে মুসল্লিরা নিজেদের গুনাহ মাফ চেয়ে স্রষ্টার কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়া দেশ, জাতি ও বিশ্বমুসলিমের কল্যাণে দোয়া করা হয়।
নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাআ ও মুআনাকায় মেতে উঠেন। এসময় শাহী ঈদগাহে পরম এক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ঈদগাহটিতে সিলেটের প্রশাসনিক ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা নামাজ আদায় করেন।