কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
তরুণ আলেম। বেশ মেধাবী। বয়স মাত্র ২৬। সদ্য চাকরি পেয়েছেন। হাল ধরেছিলেন সংসারের। কিন্তু এত অল্প বয়সেই তাকে থেমে যেতে হবে, চলে যেতে হবে সব বন্ধন ছিন্ন করে- সেটি কেউ ভাবতে পারেননি। কিন্তু ঘটেছে এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ইফতেখার তামিম। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার খাড়াভরা গ্রামের মো. আব্দুল হালিমের ছেলে। লিভার-রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন।
বিকালে খাড়াভরা শাহী ঈদগাহে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে।
পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান) পাস করা ইফতেখার তামিম শায়খ আহমদুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে একটি কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন। ভালো ফলাফল করা সেখানেই প্রশিক্ষক হিসেবে সদ্য তার চাকরি হয়।
ঈদের আগে ২৭ রমজান তিনি বাড়িতে আসেন। এসময় তার শারীরিক অসুস্থতা ধরা পড়ে এবং সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। লিভার-রোগী হিসেবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তরুণ এই আলেম সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে।
এদিকে, ইফতেখার তামিমের এমন মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান তাঁর সহপাঠী, শিক্ষক ও আলেমসমাজসহ পুরো সিলেট। সকাল থেকেই ভার্চুয়াল জগত ফেসবুকে অনেকেই করছেন ব্যথাতুর মন্তব্য।
জায়্যিদ রহমান নামের এক আলেম ও তামিমের সহপাঠী লিখেছেন- ‘আমাদের আর দেখা হলো না। হঠাৎ একদিন দেখা হবে - আমিও তর কাছে চলে আসবো রে। গত ঈদের পর সিলেট থেকে বাড়ি তার ফিরতেই হবে, রাত তখন প্রায় বারোটা ফিরিয়ে। একটা কারে তুলে দিলাম।
সাহস পাচ্ছিলাম না। ইফতিও খুব ভয়ের মধ্যে ছিলো। আমাকে বলছিলো তুইও চল কিন্তু আমি যেতে পারি নি। বললাম শুন, তর লোকেশন শেয়ার কর। আমি তরে ট্যাগিং করবো। তারপর বাড়ি গিয়ে জানালো সে পৌছেগেছে।
এই একঘন্টার রাস্তা একা যেতে এতো ভয় করলো। এই ছেলেটা একা মাঠির ঘরে ক্যাম্নে থাকবে,, আল্লাহ।
কদিন আগে বললো, অই! একটা জাগায় যাবো কিন্তু একা যেতে পারবো না, তুই যেতে হবে। আমার মাদ্রাসার বাচ্চাদের পরিক্ষা চলছিলো। বললাম, না রে। আমি যেতো পারবো না। বললো, লাইফে একটা দিন তর কাছ থেকে চেয়ে নিচ্ছি। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। ডিউটি শেষ করে তাড়াতাড়ি দুইটা টিকিট বুকিং দিয়ে আসলাম। একা যাবে না। অর না কি ভাল্লাগে না। এখন তুই একা থাকবে ক্যাম্নে রে?
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে নতুন জব পাওয়ার পর আমার অফিসো আসলো বিদায় নিতে৷ ও ব্লাড দিয়ে আসছে। আমিও বিদায় দিলাম। মুসাফা-মুয়ানাকা করলাম। হাসি মুখে বিদায় দিলাম। রমজানে অনেক সাথে কথা হলেই বলতাম আমাদের তামিম তো আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে জব পেয়েছে।
সামান্য বিচ্ছেদের সময় তুই বিদায় নিয়ে যেতে, কিন্তু এতো বড় বিচ্ছেদ ইফতি একটাবার তুই বল্লেও না!?
আল্লাহ তরে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।’
সিলেট দারুল আজহার মডেল মাদরাসার প্রিন্সিপাল তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন- ‘আমাদের প্রিয় সন্তান, দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ তামিম দেখতে না দেখতে আজ সকালেই চলে গেল একেবারে না ফেরার দেশে! সমগ্র বিয়ানীবাজার এবং সিলেট কাঁদছে! প্রিয় ভাই আব্দুল হালিমকে আমরা কী বলে শান্তনা দেব! নিজেরা কীভাবে শান্তনা পাব! কোন ব্যাখ্যা নেই! ভাষা নেই!
ইফতেখার তামিম তার ক্ষণিকের জিন্দেগীর সল্প সময়ে যে কর্মস্রোত তৈরি করেছে তা প্রত্যাশার উর্ধ্বে! আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে ছাত্র তামীম কোর্স উত্তীর্ণ হবার দিন থেকেই নির্বাচিত হয়ে গেল আস সুন্নাহর বরিত শিক্ষক হিসেবে। একই সাথে সে ছিল দ্বীনি কাফেলা ইসলামি ছাত্র মজলিসের দায়িত্বশীল। সম্পুর্ণ সুস্থ, সবল টগবগে সেই আশা জাগানিয়া তামিম এক সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে আসল ঈদের ছুটিতে। আর এই ঈদের কোলাহলের মাঝেই চিরদিনের জন্য চুপ হয়ে গেল সে! আহা! হা!!
অসহনীয় অন্তর-যাতনার পরও হালিম ভাইকে সবরে জামিলের উসুল মেনে নিতে হবে। এই ছাড়া তাকে আর কিছুই নেই বলার।
আল্লাহ প্রিয় তামিমকে জান্নাতের পাখী বানিয়ে দিন।’
এদিকে, ইফতেখার তামিম চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন- ‘এই তো, আর কিছু দূর, তারপরই মৃত্যু। চিরপ্রশান্তি।’
তাঁর এই স্ট্যাটাসটি অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে তুলে ধরছেন নিজের ব্যথানুভূতির কথা।