কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
অযত্ন, অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম প্যাটার্নের বাংলো স্থাপত্যরীতিতে গড়ে তোলা দেশের অন্যতম নান্দনিক এবং আধুনিক বাস টার্মিনাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল এটি। তবে বছর না ঘুরতেই সেই সম্ভাবনার জায়গা এখন পরিণত হয়েছে হতাশার প্রতীকে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের নজরদারি ও পরিবহন শ্রমিকদের যাচ্ছেতাই ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে টার্মিনালের সৌন্দর্য। অযত্ন ও ব্যবহারের অভাবে টার্মিনালের চেয়ারগুলোতে পড়েছে জং। লাইট-সিলিং ফ্যান খসে পড়েছে। তালাবদ্ধ টাওয়ারটি রীতিমতো ভূতের বাড়ির মতো পরিত্যক্ত। ভিআইপি বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গায় মাকড়শার জাল। দামি কাঁচের তৈরি দেয়ালজুড়ে টাঙানো পরিবহন শ্রমিকদের নির্বাচনী লিফলেট ও ব্যানার যেন অব্যবস্থার নীরব সাক্ষী।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি)-এর আওতায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রায় ৮ একর জমির ওপর নির্মিত এই টার্মিনাল কমপ্লেক্সে মোট ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫৬ কোটি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা।
বিশাল এই কমপ্লেক্সে রয়েছে আলাদা আগমন ও বহির্গমন টার্মিনাল, পাঁচতলা গোলাকার প্রশাসনিক টাওয়ার, আধুনিক কন্ট্রোল রুম, পুলিশ ও পর্যটন তথ্যকেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট, ফুড কোর্ট, ভিআইপি বিশ্রামাগার, ব্রেস্ট ফিডিং ও স্মোকিং জোন, নারী-পুরুষ ও অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা শৌচাগার এবং সিক বেডসহ আধুনিক যাত্রীসেবা ব্যবস্থা। ৩০০ ফুট দীর্ঘ বহির্গমন ভবনে একসঙ্গে দাঁড়াতে পারে ৪৮টি বাস, যাত্রীদের জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল ও ৩০টি টিকিট কাউন্টার।
২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনালটি চালু করা হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নির্মাণে বিভিন্ন ত্রুটির অভিযোগ ওঠে এবং সিটি করপোরেশন সমালোচনার মুখে পড়ে। গঠিত হয় তদন্ত কমিটিও। এরপর থেকে আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা কিংবা মনোযোগ দেখা যায়নি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করা হয়নি টার্মিনালটির।
বর্তমানে টার্মিনালটির দেখভালের দায়িত্ব ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের হাতে। সিসিক জানায়, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ৫৬ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য এটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারদের সীমিত রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব থাকলেও বড় কোনো সংস্কারের দায় সিটি করপোরেশনের ওপর রয়েছে।
এদিকে নতুন টার্মিনালের তুলনায় যাত্রীদের ভিড় বেশি পুরোনো কদমতলী-হুমায়ুন রশীদ চত্বর সড়কের পাশের কাউন্টারগুলোতে। সেখানে সহজে টিকিট পাওয়া যায় এবং কাউন্টার খুঁজতে হয় না- এটাই যাত্রীদের প্রধান যুক্তি। এছাড়া টার্মিনালের অভ্যন্তরের কাউন্টারগুলোর দুরবস্থা ও হয়রানি এড়িয়ে অনেকেই রাস্তার পাশের সার্ভিসই ব্যবহার করছেন।
তবে টার্মিনালের অভ্যন্তরে কিছু স্থানীয় রুটের বাস কাউন্টার ও স্ট্যান্ড চালু থাকায় সেসব যাত্রীদের আনাগোনা দেখা যায়। এর ফলে শহরের রাস্তায় যানজট কিছুটা হলেও কমেছে বলে মনে করছেন বাস চালক ও যাত্রীরা।
সিলেট বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনাল চালুর পর থেকে সিটি করপোরেশনের কোনো তদারকি নেই। ইজারাদাররাও দায়িত্ব সেভাবে পালন করছে না। ফলে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে টার্মিনালের ইজারাদার সেলিম আহমদ বলেন, ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট ৫৬ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে। এখানে ২ লাখ টাকা সমপরিমাণের খরচের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ আমাদের হাতে। বাকি বড় কোনো সংস্কারের প্রয়োজন পড়লে তা সিটি করপোরেশন করে দেবে। আমরা নিয়মিত তদারকি করি, বেশ কিছু সমস্যা এসেছে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত তা সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, টার্মিনাল ইজারা দেওয়া হয়েছে, এখন দায়িত্ব ইজারাদারের। বড় কোনো সংস্কার প্রয়োজন হলে আমরা দেখবো।
তিনি আরও বলেন, টার্মিনালটি এখন আর নতুন করে উদ্বোধন করার চিন্তা নেই। যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।
(মূল রিপোর্ট : জাগোনিউজ)
.png) 
                     
                     
                     
                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    