​​​​​​​বৈছাআ নেত্রীকে ‘ধ র্ষ ণে র হুমকি’ জেলার সদস্যসচিবের!

  • বৈছাআ সিলেটের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব চরমে : একপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির দ্বন্দ্ব এবার চরমে পৌঁছেছে। একপক্ষ বুধবার (৮ মে) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব নুরুল ইসলামকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। 

অপরদিকে, বৈছাআ জেলা কমিটির যুগ্ম-সংগঠক সুমাইয়া আক্তার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করেছেন গুরুতর অভিযোগ। সিলেট কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে নুরুল তাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন এবং যৌনহয়রানি করেছেন বলে উল্লেখ করেন। 

বুধবার বিকালে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈছাআ জেলা কমিটির আহ্বায়ক (একাংশের বিজ্ঞপ্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে) আকতার হোসেন বলেন- তার কমিটির সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম তাকে আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান মর্মে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। অথচ এমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। কাজটি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এটি হিংসাত্মকভাবে করেছেন নুরুল। তার এই ভুয়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির ২৭২ জন সদস্যের মধ্যে ২৫৪ জন সদস্যই অবগত নন। ফলে বিজ্ঞপ্তিটি তারা প্রত্যাখ্যা করেছে। 
লিখিত ব্ক্তব্যে আকতার আরও বলেন- যদি কোনো কারণে অব্যাহতি দিতেই হয় তাহলে এটা সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির এখতিয়ার। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসেনি। তার এমন অসাংগঠনিক কাজের জন্য আমরা তাকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো । 

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, যা কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে যে সংগঠনের কয়েকজন দায়িত্বশীল সদস্য রাজনৈতিক দলের হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, যা সংগঠনের মূলনীতিবিরোধী। কেউ রাজনৈতিক দল বা ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। অন্যথায় সংগঠন তার নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘জুলাই ২৪’-এর বিপ্লবী চেতনা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট মহানগর আহ্বায়ক কমিটির মুখ্য সংগঠক মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা শাখার যুগ্ম-সংগঠক সুমাইয়া আক্তার ও মহানগর কমিটির ফাহিমা মাহি।

উপস্থিত ছিলেন- জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ, মহানগর শাখার আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ও মহানগরের মুখ্যপাত্র আলী রিয়াদ। উপস্থিত ছিলেন মহানগর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান-মহানগর সংগঠক ফাহিমা মাহি, যুগ্ম আহ্বায়ক লাহিন আহমদ, সুলতান, মাহফুজ, রানা, জিয়া, সাদ্দাম, জারওয়ার, আশরাফুল, লাকায়েত ও কামরান প্রমুখ।

এদিকে, জেলা শাখার যুগ্ম-সংগঠক সুমাইয়া আক্তার তার কমিটির সদস্যসচিব নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বুধবার সিলেট কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণের হুমকি ও  যৌনহেনস্তার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন- তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির একজন যুগ্ম সংগঠক ও ফান্ড সেলের সদস্য। এই ফান্ড সেল-এর সদস্য সংখ্যা মোট ৫ জন। গত ৬ মে ফান্ড সেল সম্পাদক সালমান আহমদ খুরশেদের নিকট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফান্ডের যাবতীয় জমা ও খরচের হিসাব চান সুমাইয়া। কিন্তু সালমান হিসাব দেওয়ার পরিবর্তে ফখরুল হাসান সৌরভসহ নুরুলের সহযোগিরা সুমাইয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরদিন সালমান হোয়াটসঅ্যাপে একটি গড়মিলের হিসাব দিলে আমি এতে সন্তুষ্ট নই বলে জানাই। এ কথা বলতেই সালমান ও নুরুল এবং তাদের সহযোগিরা সুমাইয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে যৌন-হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন। এসবের স্ক্রিনশর্ট বা প্রমাণ সুমাইয়ার কাছে রয়েছে। 

তবে সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বৈছাআ জেলা কমিটির সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম। বুধবার রাতে তিনি কওমি কণ্ঠকে বলেন- মূলত যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কেউ না। কেন্দ্রের নির্দেশেই আকতার হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

কেন্দ্রের লিখিত আদেশপত্র আছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন- লিখিত নেই, মৌখিক আদেশ ছিলো এটি। 

ধর্ষণের হুমকি ও যৌন-হেনস্তার অভিযোগের বিষয়ে নুরুল ইসলাম কওমি কণ্ঠকে বলেন- এসব মিথ্যা। পুলিশি তদন্তে সত্যটা বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই।