কামরুল ইসলাম মাহি :
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে বাদ পড়েছিলেন দলটির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী। এরপর সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে ভোটে লড়ে হারান জামানত। দল ও দলের বাইরে ব্যাপক সমালোচিত হন। ‘একুল-ওকুল দুকুল গেল’ অবস্থায় কাটে গত আট মাস।
গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ফের তৎপর হয়ে উঠেন তিনি। দলে ফিরতে তদবির-লবিং করেন নানা পর্যায়ে। সিলেটে সম্প্রতি হওয়া জমিয়তের সম্মেলনেও উপস্থিত হন। কিন্তু তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় দর্শকের সারিতে, ডাকা হয়নি মঞ্চে। জমিয়ত তাঁকে গ্রহণ না করায় অবশেষে দলটিতে ‘জীবন-যৌবন শেষ করা’ এই নেতা তাঁর ‘সাথীদের কাছে আন্তরিক ক্ষমা চেয়ে’ যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দলীয় কার্যালয়ে প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে দলটিতে যোগ দেন। এসময় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির রেজাউল করিম জালালী, যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দীন আহমদ, আতাউল্ল্যাহ আমীন ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসা উপস্থিত ছিলেন।
যোগ দেওয়ার বিষয়টি কওমি কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসা।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে শাহীনূর পাশা চৌধুরীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে খেলাফতে যোগদানের কয়েক ঘন্টা আগে তিনি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেন- ‘ক্ষমা করে দিও আন্তরিক সাথীরা।’
উল্লেখ্য, শাহীনূর পাশা চৌধুরীর বাড়ি সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী গ্রামে। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে মোট পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে চারবার বিএনপি-জামায়াতের জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে, একবার নির্বাচন করেছেন নিজের দলের প্রতীক খেজুরগাছ নিয়ে।
আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে অংশ নিয়ে জয়ী হতে পারেননি। এরমধ্যে করোনাকালীন সময়ে হেফাজতের একটি মামলায় রমজান মাসে ইতিকাপরত অবস্থায় মসজিদ থেকে তাকে গ্রেফতার তৎক্ষালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন তিনি হেফাজতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আইন সম্পাদক পদে ছিলেন।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বির্তকিত নির্বাচনে কিংস পার্টি খ্যত তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচনে জামানত হারান।
ওই নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে দেখা করেন পাশা। তাঁর সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের আরও কয়েকজন নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পরদিন পাশার দলীয় পদ স্থগিত করে চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় মহাসচিব। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় জমিয়ত থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। শাহীনুর পাশা তখন বলেছিলে, ‘জমিয়তের জন্য জীবন-যৌবন শেষ করেছেন। এখন দলের একটি অংশ তাঁকে বাধ্য করছে দল ছাড়তে।’
পাশা ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক জীবনের শুরু করেন। জমিয়তের ছাত্র সংগঠন ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরে জমিয়তের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও হন। দল থেকে বাদ পড়ার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা মাসিক তৌহিদী পরিক্রমা’র সম্পাদক ও জামিয়া দারুল কুরআন সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বহুল আলোচিত এই রাজনীতিবিদ।