কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সেই ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটে ভুয়া প্রবেশপত্র নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছাত্রী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারও সঙ্গে কথা বলতেও ভায় পাচ্ছেন।

তাহমিনা আক্তার নামের এই এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিলেট মদন মোহন কলেজের ছাত্রী। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে পরীক্ষাকেন্দ্র সিলেট সরকারি কলেজে গিয়ে জানতে পারেন- তার প্রবেশপত্রটি ভুয়া। তখনই তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি ভেঙে পড়েন কান্নায়। 

এই ধকল কাটিয়ে উঠার আগেই তাহমিনার উপর আরোপ হয় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড। যার ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। তিনি পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন।

জানা যায়, একই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর-সম্বলিত মদন মোহন কলেজের দুইজন ছাত্রী বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে যান। পরীক্ষা শুরুর আগে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত ছাত্রীকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। আর ভুয়া প্রবেশপত্রধারী ছাত্রীকে আটক করে রাখা হয়। 

ওই সময় সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ জেড এম মাঈনুল হোসেন কওমি কণ্ঠকে বলেন- আটকের পর ছাত্রীটি বলছে- পরীক্ষার ফি প্রদানের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তার দুলাভাই একজনের মাধ্যমে টাকা দিয়ে নাকি এই প্রবেশপত্র আনিয়ে দিয়েছেন। জাল এডমিট কার্ড তৈরির বিষয়ে ওই ছাত্রী বা তার দুলাভাইয়ের হাত থাকলে আমাদের উচিৎ তাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু পরীক্ষার্থী ছাত্রী হওয়ায় এখানে মানবিকতারও একটি বিষয় আছে। তাই তাকে পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হবে। তবে তারা যদি প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন তাহলে যে দালালের মাধ্যমে এটি করিয়েছেন তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

কিন্তু এরপর সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহমুদ আশিক কবির পরীক্ষাকেন্দ্রে যান এবং ওই ছাত্রীকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন- ‘ভুয়া প্রবেশপত্রে পরীক্ষা দিতে আসায় শিক্ষার্থীর অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’

তবে সিলেটের সচেতন মহলের বক্তব্য- মানিবক বিবেচনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর প্রতি এত কঠোর না হলেও পারা যেত। বরং যে দালাল এই এমডিট কার্ড তৈরি করে দিয়েছে তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা বেশি প্রয়োজন ছিলো। ওই দালাল যখন ভুয়া এমডিট কার্ড তৈরি করতে পেরেছে, তখন নিশ্চয় আরও বড় ক্রাইমও তার দ্বারা সম্ভব।

কারাদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেটের সচেতন নাগরিকরা। 

এদিকে, ওই ছাত্রীর পরিবার-সংশ্লিষ্ট একজন বৃহস্পতিবার রাতে কওমি কণ্ঠকে জানিয়েছেন- গত কয়েক দিন ধরে ওই ছাত্রীর দুলাভাই স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই অবস্থায় দালালের কারণে বিপদে পড়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী শ্যালিকা। কারাদণ্ডাদেশের পর মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই ছাত্রীও। তাই ওই ছাত্রীর বোন পুরো বিষয়টি তুলে ধরে কারাদণ্ড মওকুফের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন দাখিল করবেন।

ওই ছাত্রীর বোন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন- মানবিক বিবেচনায় জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে সদয় হবেন।