কামরুল ইসলাম মাহি >>
পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সম্প্রতি ছুটে যাই মালদ্বীপে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করেছিলা। সময় অল্প, কিন্তু অভিজ্ঞতা ছিল গভীর ও স্মরণীয়।কারণ মালদ্বীপ ইউনিক এক দেশ! বারোশ ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপ। মহাসাগরে এই দ্বীপগুলো ছড়িয়ে আছে মালার মতো। এর মধ্যে বসবাসযোগ্য মাত্র ২০০টি।
সিলেট থেকে শুরু। রাত ১১টায় ব্যাগ গুছিয়ে রাত ১টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেই। ভাঙাচোরা রাস্তা আর যানজট পেরিয়ে সকাল ৭টায় গিয়ে পৌঁছিলাম উত্তরায়। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডুকে বোর্ডিং পাস হাতে নিয়েই ইমিগ্রেশন পেরোতে সময় লেগেছিল মাত্র দুই মিনিট। মালদ্বীপে পৌঁছেও ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার মিনিটেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সাগর ছুঁয়েই রানওয়ে। এমন এয়ারপোর্টে নামার উত্তেজনাই আলাদা। ছোট ছিমছাম বিমানবন্দর।
মালদ্বীপে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা প্রথমেই আমার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে পেশা জানতে চাইলেন। সাংবাদিক পরিচয় শুনে অফিসের এনোসি দেখতে চাইলেন। রিটার্ন টিকিট, সঙ্গে কত ডলার তা জিজ্ঞেস করলেন। দ্রুত সব প্রক্রিয়া শেষ হলো। ভ্রমণের কাগজপত্র যাচাইয়ের সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ভদ্রতা ও পেশাদারিত্ব ভ্রমণের প্রথম ধাপ সহজ করে দিয়েছিলো।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে প্রথম গন্তব্য ছিল হুলেহুলেমালে শহর। নারিকেল গাছ আর সবুজে ছাওয়া দ্বীপটি চোখে পড়ল। পরিচ্ছন্ন, নিরিবিলি ও আধুনিক পরিকল্পনায় গড়া এক পরিপাটি শহর। সাগরের ধারে এই শহরে সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছি পরিবহন ব্যবস্থায়। মানুষ কম, স্কুটি বেশি। অবশ্য এই শহরই নয় পুরো মালদ্বীপেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই স্কুটি চালায়। আছে বাস, গাড়ি, সবই আছে—কিন্তু নেই কোনো হর্নের শব্দ! পুরো শহর যেন শব্দহীন এক সুশৃঙ্খল সমাজ। এমন পরিবেশ আগে দেখেছিলাম ২০২২ সালে ভ্রমনকালে ভারতের শিলং শহরে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা কল্পনাও করা যায় না।
শহরে দেখা হয়েছিল প্রবাসী কিছু বাংলাদেশির সঙ্গে—তাদের আন্তরিকতা প্রবাসে দেশের অনুভূতি এনে দেয়।
দ্বিতীয় দিন রাজধানী মালে শহরে ঘুরেছি। দেখেছি রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের মতো প্রশাসনিক এলাকা। গোছানো শহরটি নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলায় অনন্য। সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছি মালদ্বীপের জাতীয় মসজিদ ‘হুকুরু মিস্কি’ দেখে। শত শত বছরের পুরনো এই মসজিদটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত নিদর্শন।
মুহুর্তেই মনে হলো আমাদের রাজধানী ঢাকার চিত্র। মালে ঘনবসতির শহর, ছোট শহর, জায়গার সংকট আছে, রাস্তা সরু, তবুও দারুণ শৃঙ্খলা আছে। মানুষ শতভাগ নিয়ম মেনে চলে। শহরটি পরিচ্ছন্ন। মালে শহরে হাটি আর আমাদের  ‘মহা উন্নত’ ঢাকার জন্য কষ্ট বাড়তে থাকে।
সেদিন দুপুরে মালদ্বীপের স্থানীয় খাবার—টুনা, রোশি আর নারকেলভিত্তিক পদের খবার খেয়েছি। স্বাদে ভিন্নতা ছিল, অভিজ্ঞতায় ছিল নতুনত্ব।
তৃতীয় দিনটা ছিল একান্ত নিজের জন্য। সমুদ্রের ধারে বসে, ঢেউয়ের শব্দ আর নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছি আত্মমগ্ন সময়। বিকেলে ঘুরে দেখেছি কয়েকটি পর্যটন স্পট—প্রত্যেকটিতেই প্রকৃতি নিজেকে ভরে দিয়েছে রঙে-রূপে। সন্ধ্যায় হোটেলে এসে কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে রাত ১১টার দিকে বের হলাম। রাতের খাবার শেষ করে রাত তখন ১২টা। এত রাতেও জমজমাট। ছেলে মেয়েরা সময় কাটাচ্ছে। শহরটি কতটা নিরাপদ সেটা টের পাওয়া যায়। আবারও ভাবি আমাদের দেশে বিভাগীয় শহরগুলো কিংবা ঢাকাতে কি এমন কল্পনা করা যায়!
অল্প কয়েক দিনের সফর হলেও মালদ্বীপের পরিবেশ, মানুষ ও সংস্কৃতি হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ফিরে এসেও মন পড়ে থাকে সেই নীরব দ্বীপে। সময় ও সুযোগ হলে আবার যাবো তবে আরেকটু বেশি সময় নিয়ে।
লেখক : সিলেট প্রতিনিধি, এটিএন নিউজ
.png) 
                     
                     
                     
                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    .jpg)