কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট-৩ আসন নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন '১০ বছর ধরে সমাজসেবায় ব্রত থাকা' বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মইনুল বাকর।
তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক প্রখ্যাত আইটি কোম্পানি 'অ্যাপল'র কর্মকর্তা।
সোমবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় সিলেট মহানগরের আম্বরখানা এলাকার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মইনুল বাকর বলেন- দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যাবৎ আমি ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষে আইটি ব্যবসার সাথে জড়িত। ইউকে এবং মিশরে আমার ২টি সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও আমি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি 'অ্যাপল'-এর hardware & software experts। আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে সফলভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি গত ১০ বছর ধরে আমি আমার এলাকা সহ দেশের ৬৪ জেলায় অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করে আসছি।
লিখিত বক্তব্যে সিলেট-৩ আসনের সম্ভাব্য এই প্রার্থী বলেন- ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থেকে আমি সবচেয়ে কনিষ্ঠ সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-২ (বালাগঞ্জ- বিশ্বনাথ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি।
মানুষের জন্য কাজ করা ছোট্ট বেলা থেকেই শখ উল্লেখ করে মইনুল বাকর আরও বলেন- এ পর্যন্ত বাংলাদেশ বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি প্রায় শতাধিক বেওয়ারিশ মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের ফাউন্ডেশন অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ঘর নির্মাণ এবং বিভিন্ন মসজিদে মরদেহ বহনের খাটিয়া সরবরাহ করে আসছে।
এছাড়াও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রাস্তা ঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যক্তিগত ভাবে অর্থায়ন, অসহায় ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, আমাদের মা-বোনেরা যাতে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন যেজন্য নিজস্ব মাদ্রাসায় ফ্রি পাঠদান চালুসহ নানা ধরনের কাজ আমি করে আসছি। মানবকল্যাণমূলক এই কাজগুলো বিশ্বব্যাপী চলমান। ইতোমধ্যে সিবীন-আল-কুম, মনফিয়া মিশরের একটি শহরে কমিউনিটির মসজিদ নির্মাণ ও চাকুরির ব্যবস্থা করি। কোনো কিছুর প্রত্যাশায় কখনো করিনি, তাই আমার কাজ হয়েছে আমাদের বালাগঞ্জ উপজেলাসহ বাংলাদেশের ৬৪ জেলা বিস্তৃত।
এছাড়াও যুক্তরাজ্য এবং মিশরে বাঙ্গালি কমিউনিটির যেকোনো ধরনের মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রমে আমি যুক্ত ছিলাম একেবারেই নির্মোহভাবে। আমি ধর্ম, বর্ন, জাতি, গোত্র নির্বিশেষে মানুষের কল্যানের লক্ষে কাজ অতীতে করেছি এবং আমৃত্যু করে যাবো ইনশা আল্লাহ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাওয়া ময়নুল বাকর বলেন- তরুণ বয়স থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় এবং দীর্ঘদিন মানবিক কাজে জড়িত থাকার পরেও ১৯৯৬ সালের পর থেকে আর কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো প্রকার নির্বাচনে অংশ নেইনি। তবে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি এবং এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিলো, যারা মনে প্রানে সততাকে ধারন করে, সেসব মানুষ যেন দেশের পবিত্র সংসদে আসীন হোন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পর ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুলোতে অনেকেই বারবার প্রার্থীতা ঘোষনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
কিন্তু বিগত সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা, চারিদিকে দু:শাসন, নির্বাচনে দলীয় প্রভাব, রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি,লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা সহ বিভিন কারনে হতাশাগ্রস্থ হই।
তবে, ছাত্র জনতার আন্দোলনে ৫ আগষ্ট নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। আবারো আশা সঞ্চারিত হয় আমার মনে। আমি সিদ্ধান্ত নেই, নতুন বাংলাদেশে পরবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য মন খুলে কাজ করার। আর মানুষের জন্য কাজ করার অন্যতম উপায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে পবিত্র সংসদ নিজ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করা।
তিনি আরও বলেন- বিলেতের বিলাসী জীবন ছেড়ে, নিজের পরিবার পরিজনের মায়া ভুলে একমাত্র দেশের এবং জন্মভূমির মানুষের জন্য আমি একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। দল-মত নির্বিশেষে আমার এলাকার মানুষ আসলেই অবহেলিত। তাদের দরকার যোগ্য নেতৃত্ব। জনগনের প্রয়োজন সৎ, নির্ভীক, লোভ লালসার উর্ধে থাকা একজন নেতা। যার অবৈধ টাকার প্রয়োজন নেই, যার যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, যার আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এসব কিছু বিবেচনা করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ জন্মভূমি সিলেট ৩ ( দক্ষিণ সুরমা - বালাগঞ্জ- ফেঞ্চুগঞ্জ) আসন থেকে আমি সংসদ সদস্য ( স্বতন্ত্র) প্রার্থী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় উল্লেখ করে এই প্রবাসী প্রার্থী বলেন- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ছুটে চলা, বর্হিবিশ্বের ২টি দেশে ইতোমধ্যে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা সহ নানা ধরনের অভিজ্ঞতা গ্রহণ এবং জীবন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য, পারিবারিক স্বচ্ছলতা সহ সবকিছু থাকলেও জনগনের জন্য কাজ করার আজন্ম লালিত স্বপ্ন আমি ভুলতে পারিনাই। তাই যে যাই বলুক, আমার এলাকার গণমানুষের আর্ত সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে কাজ করার লক্ষ্য আমি নিয়েছি সেই লক্ষে আমি অবিচল থাকবো ইনশা আল্লাহ।
ময়নুল বাকর বলেন- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে অনেক দলীয় প্রার্থী থাকবেন। আমি নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে কাজ করার অনেকটাই স্রোতের বিপরীতে হাঁটার মতো। জীবনের প্রতিটি মূহূর্তে নিজেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছি, আজও করতে চাই। আমার মত সাদামাটা আর স্বপ্নবাজের মানুষের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন আপনাদের অর্থাৎ- সাংবাদিকদের।
প্রবাসী এই আইটি কর্মকর্তা বলেন- সিলেট-৩ আসনের মানুষ বিগত সময়ে শাষিত এবং শোষিত হয়েছে। রাস্তাঘাটের দুরবস্থা, নদীভাঙ্গনের বিপর্যস্ত জনজীবন, দিন দিন বাড়ছে তরুনদের বেকারত্বের সংখ্যা, তৃতীয় প্রজন্মের জন্য নেই যথাযথ কারিগরি শিক্ষার সুযোগ, প্রতিবছর বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। এসব কিছুই আমাকে ব্যথিত করে। তাই সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে এলাকার শ্রমজীবি, মেহনতি ও সাধারণ মানুষের কাছে। আমি নির্বাচিত হই না হই, বাকি জীবন আমি আমার এলাকার গরিব-দু:খি মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়াবো। আমার শেষ ইচ্ছা, আমার জন্মমাটি সবুজ-শ্যামল এই সিলেটেই যেন আমি নি:শ্বাস ফেলতে পারি।