সিলেট আসলে মনে শান্তি পাই : মির্জা ফখরুল

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- সিলেট আমাদের জন্য পূণ্যভূমি। আমি যখন সুযোগ পাই, সিলেটে আসি। প্রধান কারণ হচ্ছে- সিলেট শাহজালাল-শাহপরাণ রাহ.-এর বিচরণভূমি। তারা এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছিলেন, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

একই কারণে প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ছুটে আসেন সিলেটে।

একই সঙ্গে সিলেট আমাদের কাছে আরও প্রিয়- আমাদের নেতা তারেক রহমানের শ্বশুর বাড়ি।

এসব কারণে সিলেট আসলে মনে শান্তি পাই।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের আমন্ত্রণ ও উদ্যোগে এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সহযোগিতায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

সিলেট মহানগরের পাঠানটুলা এলাকার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাগফিরাত ও বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। 

গণতন্ত্রের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি, নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হবে- এমন মন্তব্য করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে আরও বলেন- নির্বাচিত সরকারের চাইতে শক্তিশালী কোন সরকার হতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের আগে ১৫ বছর আমাদের সিলেটের বহু নেতাকর্মী ভাই গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় রক্ত দিয়েছেন, মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, হাতে পায়ে বেড়ি দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। চব্বিশে আমার ভাই, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে হাসিনা। আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে সিলেট এসেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায়নি, বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ, বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছি। ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলাম ঠিক আছে, কিন্তু আমরা বলছি লড়াই তো গণতন্ত্রের লড়াই, আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে মানুষ ভোট দিবে, কথা বলার সুযোগ পাবে, তরুণরা কাজের লেখাপড়ার সুযোগ পাবে, নারীরা নিরাপত্তা পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে, এইরকম একটি রাষ্ট্র। এজন্য আমরা নতুন করে সংগ্রাম শুরু করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সেই দল যে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, যিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। শেখ মুজিব একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সব মিডিয়া বন্ধ করেছিলেন চারটি রেখে। সেই অবস্থা থেকে জিয়াউর রহমান মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করেছিলেন।’

‘আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই, বাংলাদেশকে উন্নত দেশ করতে চাই। এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। এই ৩১ দফা মধ্যে আছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন যা আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে। তরুণরা সামনের দিকে যেতে চায়, বিএনপিকে সেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আসুন সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ি।’

তবে বিষয়টি সহজ না এবং অনেকে নির্বাচনে বাধা দিতে চায় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, যত নির্বাচনের দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, চাকরির সুযোগ তৈরি হবে না, জুডিশিয়াল সিস্টেম ভেঙে পড়বে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে।’

‘সেজন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। যে সরকারের পিছনে মানুষ আছে, জনসমর্থন আছে। নির্বাচিত সরকারের চাইতে শক্তিশালী কোন সরকার হতে পারে না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দেখা করে নির্বাচনকালীন একটি সময় নির্ধারণ করায় ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখন আপনাদের দায়িত্ব বিএনপিকে যেনো মানুষ ভালোবাসে, এটি তৈরি করতে হবে, এজন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। আসুন আমাদের বিরুদ্ধে কেউ যেনো খারাপ কথা বলতে না পারে, জমি দখল করেছি, চাদাবাজি করেছি একথা যেনো কেউ বলতে না পারে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডা. এ জেড এম জাহিদ, ইকবাল মাহমুদ টুকু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং যুগ্ম সম্পাদক খাইরুল কবির খোকনসহ আরও কয়েকজন।

এর আগে সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে একটি ফ্লাইটে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

সিলেট এয়ারপোর্টে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান- বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি. কে. গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রমুখ। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেটে পৌঁছে প্রথমেই হযরত শাহজালাল (রাহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রাহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেছেন। 

মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন- আমাদের প্রত্যাশা- অন্তবর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করবে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হবে।

এদিকে, পাঠানটুলার অনুষ্ঠান শেষে সিলেট জেলা বিএনপির সিলেট বিএনপির উদ্যোগে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ‍্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক নারকীয় হত‍্যাকাণ্ডের শিকার সিলেট জেলার সকল শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান মহানরগরের দরগাহ গেইট এলাকার হোটেল স্টার প্যাসিফিকে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন- ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে তরুণরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে শহিদ হয়েছেন- তাঁদের আত্মত্যাগ জাতি কোনোদিন ভুলবে না। তাঁদের পরিবারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আজকের এই বিশেষ আয়োজন।