কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেট প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) নারী প্রশিক্ষণার্থীদের বোরকা পরিধানে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সম্প্রতি ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিষয়টি অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার দিকে মোড় নেওয়ার আগেই হস্তক্ষেপ করেছেন জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ। তারা সরেজমিনে গিয়ে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা পাননি। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সিলেটবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, গত ২৮ জুলাই দৈনিক সুরমার ডাক ((Daily Surmar Dak) নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে পিটিআই সিলেটের সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবুল কাশেমের ছবি দিয়ে একটি লেখা পোস্ট করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- ‘সিলেট প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) এ বোরকা পরিধান করলে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের ট্রেনিং বাতিলের হুমকি দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ঐ ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট মি. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় বোরকা পরলে তাদের উপর অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী। কয়েকজন নারী প্রশিক্ষণার্থী নিয়মিতভাবে বোরকা পরে ট্রেনিং সেশনে অংশ নিচ্ছিলেন। তাদের দাবি, সুপারিনটেনডেন্ট কাশেম এ ধরনের পোশাক পরিধানকে "প্রশাসনিক নিয়ম লঙ্ঘন" বলে আখ্যায়িত করেন এবং ভবিষ্যতে বোরকা পরে ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করলে ট্রেনিং বাতিল সহ অন্যান্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুমকি দেন।
এক নারী প্রশিক্ষণার্থী জানান, "আমরা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বোরকা পরি। কিন্তু এখন সেটা নিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান একটি দেশে এটি শুধু আমাদের ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপরও আঘাত।"
অতএব, এই অভিযোগের সঠিক তদন্ত করে আবুল কাশেমকে প্রত্যাহার পুর্বক তাকে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে!’
পোস্টটি অনেকেই কপি করে ছড়িয়ে দেন ফেসবুকে। ফলে ধর্মপ্রাণ সিলেটবাসীর মনে ক্ষোভ দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আগেই হস্তক্ষেপ করে সিলেটের ইমাম সমিতি।
জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার শীর্ষ কয়েকজন নেতা বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে মহানগরের সুবিধবাজারস্থ পিটিআই ভবনে যান এবং বেশ কয়েকন নারী প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে বোরকা পরার বিষয়ে জানতে চান। এসময় নারী প্রশিক্ষণার্থীরা উত্থাপিত অভিযোগটি মিথ্যা বলে জানান।
এছাড়া ইন্সটিটিউটের অন্য কর্মকর্তারাও আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগটি মিথ্যা বলে জানান। তারা আরও বলেন- আবুল কাশেম নিজে একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। নামাজ পড়েন নিয়মিত। সুতরাং তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হতাশাজনক।
সিলেট প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট পরিদর্শন শেষে ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব কওমি কণ্ঠকে বলেন- পিটিআই সিলেটের সুপারিনটেনডেন্ট আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠার পরপরই জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। এ ধারাবাহিকতায় আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আমরা সরাসরি পিটিআই ভবনে যাই এবং প্রশিক্ষণরত নারীদের সঙ্গে কথা বলি, তবে এর সত্যতা খুঁজে পায়নি। ফলে বিষয়টি গুজব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। তাই সিলেটবাসীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে- এমন গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার। সিলেট আলেম-উলামার ঘাঁটি। এমন ঘটনা ঘটলে আলেম-সমাজই প্রথমে সোচ্চার হবেন।
পিটিআই ভবন পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন ইমাম সমিতি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ এহসান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জালাল উদ্দীন ভুইঁয়া প্রমুখ।
এ বিষয়ে পিটিআই সিলেটের সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবুল কাশেম কওমি কণ্ঠকে বলেন- জানি না আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা এবং কেন এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে, কওমি কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে দৈনিক সুরমার ডাক ((Daily Surmar Dak) নামক একটি ফেসবুক পেইজের ম্যাসেঞ্জােরে কোনো ভুক্তিভোগী নারীর বক্তব্য বা যোগাযোগ নাম্বার আছে কি না জানতে চাইলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
তবে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্তও মো. আবুল কাশেমকে অভিযুক্ত করে আপলোড করা পোস্টটি ওই পেইজে বিদ্যমান থাকতে দেখা গেছে।