খালেদার বাড়ি ঘেরাওয়ে নেতৃত্ব দেন সিলেটে গ্রেফতার হওয়া বিচারপতি মানিক

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ‘জিয়াউর রহমান ফোবিয়ায়’ ভুগতেন। এ কারণে উচ্চ আদালতের বিচারিক দায়িত্ব পালনের পুরোটা সময় বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত রায় দিয়ে গেছেন।

আওয়ামী লীগের ক্যাডার বিতর্কিত বিচারপতি মানিক সম্পর্কে উচ্চ আদালতের আইনজীবী ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা বলেন, উচ্চ আদালতের অধিকাংশ মামলার শুনানিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিষোদ্গার ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে বিতর্কেরও জন্ম দেন তিনি।

প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম থাকায় বিতর্কিত রায় দিয়ে শিশু একাডেমি ও জিয়া শিুশু পার্ক উচ্ছেদের পথ করে দেন বিতর্কিত এই বিচারপতি। হাইকোর্টের কয়েকটি মামলার রায় পর্যালোচনা করে বিচারপতি মানিকের বিভিন্ন অপকর্ম সম্পর্কে জানা গেছে। তার দেওয়া অধিকাংশ রায়ে শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটত বলেও জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা জানান, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিচারকের আড়ালে ছিলেন শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য। আদালতে তার দেওয়া অধিকাংশ রায়ে আইন ও বিধি-বিধানের পরিবর্তে শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রাধান্য থাকত। বিচারকের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরও জিয়া পরিবারকে নিয়ে কুৎসা রটনা, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করা ছিল তার নিত্যদিনের কর্মসূচি। বিভিন্ন সংগঠনের নামে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে ‘গালিগালাজ’ করতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন নিজেই। গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করে ‘কালা মানিক’ খ্যাতি পান। জাতীয় সংসদ তাকে অপসারণের রুলিং দিয়ে ‘স্যাডিস্ট’ আখ্যা দেয়। এটির উল্লেখ সংসদের কার্যবিবরণীতেও রয়েছে।

বিচারকের আসনে বসে শুধু জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেই বিষোদ্গার করেননি, আদালতের বাইরেও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোয় ভূমিকা পালন করে শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মানিক।

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের মক্তিযুদ্ধের চেতনা বাণিজ্যের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন ধরনের দেশবিরোধী অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি মানিকের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তার গুলশানের বাড়ি ঘেরাও করে।


উল্লেখ্য, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছিল না চরম বিতর্কিত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের। পরে ২৩ অগাস্ট রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।

পরদিন সিলেটের বিচারিক হাকিম আলমগীর হোসেন বিচারপতি মানিককে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পরে পাসপোর্ট আইনে ভারতে ‘অনুপ্রবেশের চেষ্টা’র অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করে।

তবে ওইদিন বিকালে আদালতে তোলার সময় আলোচিত এই বিচারপতিকে লক্ষ্য করে উত্তেজিত জনতা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে।

এ ছাড়া পুলিশ প্রহরায় আদালতের সিঁড়িতে ওঠার আগে কয়েকজন যুবক কিল-ঘুষি ও পেছন থেকে টেনে ধরে আঘাত করেন। এ সময় তার কাপড়ে রক্তের দাগও দেখা যায়।

ওইদিন রাতেই সাবেক বিচারপতি মানিককে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার একটি অস্ত্রোপচার হয়। গত বৃহস্পতিবার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরে ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে হেলিকপ্টারে করে এনে ঢাকার জেলখানায় পাঠানো হয় মানিককে।