কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
সিলেট মহানগরজুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। কুকুরের আগ্রাসী আচরণে ভীতি বাড়ছে জনজীবনে। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সিটি কর্পোরেশনে দেখা দিয়েছে ভ্যাক্সিন সংকট।
তবে কিছুদিনের মধ্যে এই সংকট কাটিয়ে উঠার কথা বলছেন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
নগরবাসী বলছেন- বাড়ির ভেতর, গলির ভেতর, তারপর সড়ক-সবখানেই কুকুরভীতি। কুকুর কখন এসে কামড়ে দেয়, সেই আতঙ্ক। প্রতিদিন সকাল থেকে রাতে ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত কুকুরের ভয় মানুষের মুখে মুখে। প্রতিদিন কেউ না কেউ কুকুরের কামড়ের শিকারও হচ্ছেন।
২০১৯ সালে কুকুর নিধন না করার জন্য উচ্চ আদালত থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তারপর থেকে কুকুর নিয়ন্ত্রণের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখে, সিটি কর্পোরেশন। ফলে পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচগুণ কুকুর বেড়েছে নগরজুড়ে।
একদিকে কুকুর নিয়ন্ত্রণে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া- এ দুইয়ে জনমনে উৎকণ্ঠাও বেড়েছে। পথের মোড়, অলিতে গলিতে, অধিকাংশ পাড়ায় দল বেঁধে চলাচল করছে বেওয়ারিশ কুকুর। প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়েসি মানুষ কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
কুকুর বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে দিনের বেলাতেও চলাফেরা করতে ভয়ের কথা জানান পথচারীরা। রাত হলেতো কথাই নেই। মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে বসে কুকুরের দল। তাদের আগ্রাসী আচরণ ভয় ছড়াচ্ছে সকল বয়েসি মানুষের মধ্যে।
রাত হলে তো ভয়ঙ্কর অবস্থা। পথচারী, চলন্ত রিকসা, সিএনজি অটোরিকসা, মোটরসাইকেলের যাত্রীদেরও সুযোগ বুঝে ধাওয়া দিচ্ছে।
হাসপাতালেও বাড়ছে কুকুরের কামড়ে আহত রোগীর সংখ্যা। বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারি বা এলাকাভিত্তিক উদ্যোগও নেই। এ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মহানগরের শাহী ঈদগাহ, কাজিটুলা, লোহারপাড়া, ওসমানী হাসপাতাল, বাগবাড়ি, তালতলা, মাছুদিঘীরপাড়, জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন- বেওয়ারিশ কুকুরের ভয়ে ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। শিশুরা না বুঝে দৌড় দিলেই আক্রমণ করে ফেলে। এ কারণে শিশুদের মধ্যে ভীতি বাড়ছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, নিধন ছাড়াও বন্ধ্যাত্বসহ আরো অনেক উপায় রয়েছে কুকুর নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন, প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেন ।
জানা যায়, শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা প্রবীণ আইনজীবী মো. রেজাউল করিমকে গত সপ্তাহে কামড় দিয়েছে কুকুর। সকাল সাতটায় তিনি ঘর থেকে ছাতা হাতে নিয়ে বের হয়েছিলেন। তবু রক্ষা পাননি। পরে তাকে ভ্যাক্সিন নেয়ার পরামর্শ দেই।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পর পর মানুষ কুকুরের কামড় খেয়ে আসেন। আমি নিজেও ভয়ে থাকি।’
লামাবাজার এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক ফাতেমা আক্তার বলেন- কুকুরের ভয়ে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে ভয় হয়। যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন ভয় বেড়েই চলেছে। এর শেষ কোথায়, কেউ জানিনা।’ তালতলা মাছুদিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা জাফর খান বলেন, রোজ সকালে স্কুলে যেতে হয় সন্তানদের নিয়ে। কিন্তু সকাল বেলা পথে পথে কুকুর বসে থাকে। মির্জাজাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা রাজু বলেন, কুকুরের ভয়ে সকালে হাঁটার অভ্যাস বন্ধ করে দিয়েছি।
মহানগরের ভেতর কুকুর বৃদ্ধি কিংবা কুকুরভীতি বাড়লেও আইনের কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কুকুর নিধন না করার জন্য উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ জন্য কুকুর নিধন করা যাচ্ছে না। বেওয়ারিশ কুকুর শনাক্ত করে সেগুলোকে প্রতিষেধক দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘কুকুর নিধনের জন্য আমাদের একটা সেকশন ছিলো। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০১৭ সালে থেকে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কুকুরের কামড়ে আহত ব্যক্তিদের প্রতিষেধক (ভ্যাক্সিন) নেয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে ভ্যাক্সিনও নেই। তবে আশা- কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে। তবে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পূর্বে ডোজ নেয়ার সংখ্যা অনেক কম ছিলো। বর্তমানে জেলাজুড়ে চাহিদা বেড়েছে।’
(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)