হিসাব মেলাতে পারছেন না মামলার তদন্তকারীরা

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় রহস্য উদঘাটনে হিমশিম খাচ্ছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তারা এখন পর্যন্ত এ হত্যাচেষ্টার ঘটনায় কোনো ক্লু পাচ্ছেন না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, হাদি হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ফয়সালকে হাদির নির্বাচনি প্রচারে দেখা গেছে। ফয়সাল কেন এবং কোন উদ্দেশ্যে এবং কার প্ররোচনায় গুলি করেছে তার রহস্য উদঘাটন করতে পারছেন না।

তবে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা গেলে এ হত্যাচেষ্টার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। ডিবি জানিয়েছে, তারা মাঠ পর্যায়ে নানা তথ্য পাচ্ছে। এ হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গতকাল সোমবার আরো পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রোববার সকাল থেকে শুটার ফয়সাল ও আলমগীর প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছে গুঞ্জন ওঠে। এতে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। তবে পুলিশ বলছে, তাদের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তারা দেশেই আছেন। চোরাই পথে সীমান্ত পথ দিয়ে যাতে তারা দেশে পালাতে না পারে জন্য সীমান্তে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

গুঞ্জন উঠেছে, ময়মনসিংহ-ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে তারা ভারতে পালিয়েছে। ওই এলাকায় মানবপাচারকারীদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পায়নি তারা। হাদির ঘটনায় গত রোববার রাতে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটির তদন্ত থানা পুলিশ ডিবিতে হস্তান্তর করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, ‘হাদির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি সূত্রে জানা গেছে, হাদিকে গুলির ঘটনায় একাধিক বিষয়ে তদন্ত করছে তারা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, শুটার ফয়সালকে হাদির নির্বাচনী প্রচারে দেখা গেছে। ফয়সাল কোন প্রক্রিয়ায় হাদির সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে তা তারা খতিয়ে দেখছে। কেন ফয়সাল হাদিকে গুলি করেছে তার উত্তর খুঁজছে তারা। র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলির ঘটনায় তারা ছায়া তদন্ত করে মোটরসাইকেলের মালিকসহ ফয়সালের বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশকে হস্তান্তর করেছে। তাদের মাঠ পর্যায়ে তদন্তে ওই গুলির রহস্য উদঘাটনে কাজ করছেন তারা।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মামলা :
হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় গত রোববার রাতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ জাবের বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলা নম্বর : ১৯। মামলায় ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের হওয়ার পর পুলিশ সেটি ডিবিতে হস্তান্তর করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী পাঁচদিনের রিমান্ডে :
হাদি হত্যাচেষ্টার মামলায় মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী, শ্যালক ও এক বান্ধবীকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

গতকাল সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এই আদেশ দেয়। রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিদের আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, শুনানিকালে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর সামিয়া ও সিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়। এছাড়াও হাদি হত্যাচেষ্টায় দুর্বৃত্তদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আব্দুল হান্নানকেও গত ১৪ ডিসেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তিনদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্সকালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢামেক ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল দুপুরে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। তার হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সারাদেশে হইচই শুরু হয়।