কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেটের দেড় শ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক আলী আমজদের ঘড়িঘরের বেষ্টনীর মধ্যেই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নামক ফলক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সচেতন সিলেটবাসী- এমনকি খোদ জুলাই-যোদ্ধারাও বিষয়টির সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন- এই স্থাপনার জায়গা অন্যত্র নির্ধারণ করা যেতো। এটি ঐতিহ্যবাহী ঘড়িঘর-লাগুয়া স্থাপন করা হচ্ছে কেন? এতে বছরের পর বছর ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে প্রথম আলো সিলেটকে বিশ্বের বুকে গৌরবান্বিত করে রাখা আলী আমজদের ঘড়িঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
জানা গেছে, চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যাঁরা শহিদ হয়েছেন- তাঁদের স্মরণে প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে ঘটনাস্থলে কিংবা ঘটনাস্থলের আশপাশে একই নকশায় ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নামে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিলেট মহানগরে চারজন শহিদের স্মরণে এমন স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ এ বছরের জুলাই মাসে শুরু হয়। আগস্ট মাসে সেই শেষ হওয়ার কথা। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্মৃতিফলক নির্মাণের স্থান চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। এ কমিটিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শহিদদের শহীদ হওয়ার স্থান দেখিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আলী আমজদের ঘড়ির সামনে মো. পাবেল আহমদ কামরুল ও পঙ্কজ কুমার কর শহীদ হন। তাই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে এই দুজন স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে।
এর বাইরে বন্দরবাজার এলাকার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় মধুবন মার্কেটের সামনে শহিদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ছাত্র রুদ্র সেনের স্মরণে ঘটনাস্থলের পাশে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে।
প্রতিটি ফলক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৫ টাকা।
তবে বাকি ৩ স্মৃতিফলক নিয়ে কোনো কথা না উঠলেও ঐতিহ্যবাহী আলী আমজদের ঘড়ির বাউন্ডারির ভেতরেই এর অংশবিশেষ আড়াল করে স্মৃতিফলক নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।
তাহমিনা নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন- ‘সিলেটের ঐতিহ্য ধ্বংস করে জুলাই চেতনা ব্যবসার নিন্দা জানাই!
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়ির ঠিক পাশেই স্থাপন করা হচ্ছে জুলাই স্তম্ভ৷ এতে দুইটি স্থপনারই সৌন্দর্য নষ্ট হবে। প্রায় দেড়শ বছরের পুরাতন আলী আমজাদের ঘড়ি সিলেটের পরিচয় চিহ্ন। এই স্থাপনার এত কাছাকাছি জুলাই স্তম্ভ বানালে তা উভয় স্থাপনার সৌন্দর্য নষ্ট করবে৷ আবার সারাদেশের মত সিলেটের রিকাবিবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের পাশে এই জুলাই স্তম্ভ তৈরি হচ্ছে, যার কাজ এখনও চলমান । এর মধ্যেই ক্বিন ব্রিজের নিকটবর্তী ঐতিহাসিক আলী আমজাদের ঘড়ির পাশে আরেকটি জুলাই স্তম্ভ বানানোর প্রয়োজন পড়লো কেন?
জুলাই অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখ সারির সংগঠক হিসাবে এধরণের উদ্ভট তৎপরতার নিন্দা জানাই৷ জুলাই স্মরণে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ফলক, স্মারক নির্মিত হতে পারে৷ কিন্তু সেটা ঐতিহ্য, প্রকৃতি কিংবা জনস্বার্থ বিঘ্ন করে নয়৷
সিলেটে স্মারকের ধান্দাবাজি বহু পুরাতন৷ সিলেটে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদার্পণের শতবর্ষ পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন জনগণের অর্থ ধ্বংস করে ক্বিন ব্রিজের নিচে খুবই উদ্ভট স্থানে রবীন্দ্রনাথের মুরাল বানিয়েছিল৷ সেই স্থাপনা আজ অবহেলা, অনাদরে পড়ে আছে৷ পরিকল্পনা ছাড়া, অর্থ লুটপাটের ধান্দায় জুলাই স্তম্ভ বানালে এরও একই পরিণতি হবে৷ ফলে সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য সৌন্দর্য ধ্বংস করে চেতনা ব্যাবসা চলবে না।
আরেকটা আনপপুলার কথা বলি, জনগণ আপনাদের কাছে জুলাই হত্যার বিচার, জানমালের নিরাপত্তা চায়৷ যত্রতত্র চেতনা ব্যবসা নয়।’
এদিকে, আলী আমজদের ঘড়িঘরের ভেতরে এই স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।