কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট শাখায় খন্ডকালীন চিকিৎসক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন নিয়ে আবেদনকারী কাউকে না নিয়ে অন্য একজনকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্টেশন কমিটিকে ডিঙ্গিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুর রব তার এক আত্মীয়কে এই পদে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করিয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তারও স্বীকার করেছেন তিনি কোন পরীক্ষায় অংশ নেননি। তবে জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান মাসুম ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুর রব এর কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় চাকুরী প্রার্থী ডাঃ শাহ ফাহিমা সিদ্দিকা নামে একজন বিমান বাংলাদেশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- পেশায় তিনি একজন ডাক্তার। বাংলাদেশ বিমানের সিলেট শাখায় খন্ডকালীন ডাক্তার নিয়োগের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ২ জুন দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনিসহ অন্তত ৪ জন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ হয়নি, হঠাৎ করে গত ২৫ আগস্ট ডা: মাহের করিম চৌধুরী নামের একজন চিকিৎসক যোগদান করেন। আমরা জানতে পেরেছি, কর্তৃপক্ষ কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কোন প্রকার পরীক্ষা (লিখিত/ভাইভা) না নিয়ে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে খন্ডকালীন ডাক্তার নিয়োগ করেন। যাকে খন্ডকালীন ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে-তিনি বিমানের সিলেটের লোকাল এডমিন আব্দুর রবের নিকটাত্মীয়। তার এই নিয়োগের ব্যাপারে বিমানের লোকাল নিয়োগ কমিটির সদস্যরাও অবগত নন এবং অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তার বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডা: মাহির-এর নিয়োগ বাতিল করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় তাদের আবেদন বিবেচনার দাবি জানান ডা: শাহ ফাহিমা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, আমরা আবেদনকারীরা নিয়োগ সংক্রান্ত যে কোন পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিমানের সিলেট শাখায় খন্ডকালীন ডাক্তার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকালীন সময়ে যারা পদাধিকার বলে স্টেশন কমিটিতে ছিলেন তারা কেউই এই নিয়োগের ব্যাপারে জানেন না বলেন জানান।
জানা গেছে, স্টেশন কমিটির সভাপতি ছিলেন সদ্য অবসরে যাওয়া জেলা ব্যবস্থাপক মো: শাহনেওয়াজ মজুমদার, সদস্য সচিব ছিলেন ম্যানেজার (ফাইন্যান্স) রায়হান উদ্দিন ও সদস্য ছিলেন স্টেশন ম্যানেজার মো: শাকিল আহমদ। এদের মধ্যে জেলা ব্যবস্থাপক অবসরে গেলেও বাকী দুজন কর্মরত রয়েছেন। এই তিন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নতুন ডাক্তার নিয়োগ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
সদ্য অবসরে যাওয়া জেলা ব্যবস্থাপক মো: শাহনেওয়াজ মজুমদার জানান, আগস্টের ১ তারিখে তিনি অবসরে যান। তিনি থাকাকালে নতুন ডাক্তার নিয়োগ হয়নি।
তিনি আরও জানান, তারা ২০২৪ সালের জুনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন এবং ডাঃ শাহ ফাহিমা সিদ্দিকাসহ অনেকেই আবেদন করেন। আবেদন যাচাই বাছাই করে ৩/৪ জনের আবেদন ঢাকায় পাঠাই। শুনেছি যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে নতুন নিয়োগকৃত ডাক্তার ছিলেন না।
তিনি বলেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে আমার অবসরে যাওয়ার পর হয়েছে। তবে, আমি মনে করি যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো, সেখান থেকে যে কেউ এই চাকুরীর দাবীদার। স্টেশন কমিটির সদস্য সচিব ম্যানেজার (ফাইন্যান্স) রায়হান উদ্দিন বলেন, নতুন যে ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, এই বিষয়ে আমি অবহিত নই। আমরা যাদের নাম প্রস্তাব করেছিলাম, সেখান থেকে যে কোন একজনকে নিয়োগ দেয়ার কথা। জানি না সেটা কেন হয়নি। এয়ারপোর্টের স্টেশন ম্যানেজার মো: শাকিল আহমদ বলেন, নিয়োগের বিষয়টি বিমানের। স্টেশন কমিটিতে আছেন, তবে নতুন ডাক্তার নিয়োগের বিষয়ে তার জানা নেই।
একটি সূত্র জানায়, খন্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত ডা: মাহের করিম চৌধুরী সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুর রব এর সম্পর্কে খালাত ভাই হন। দুজনের বাড়ি মৌলভীবাজারের একই এলাকায়। মূলত জেলা ব্যবস্থাপক মো: শাহনেওয়াজ মজুমদার অবসরে যাওয়ার পর নতুন জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান মাসুমকে ম্যানেজ করে ঢাকা থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া খালাতো ভাই ডা: মাহের করিম চৌধুরীকে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুর রব। তিনি বিগত প্রায় ৭ বছর ধরে একই কর্মস্থলে টানা কর্মরত রয়েছেন। খন্ডকালীন চিকিৎসক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে নিয়ে আবেদন ঢাকায় প্রেরণে জড়িত থাকলেও এই প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে তার আত্মীয়কে সেখানে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে নিয়োগপ্রাপ্ত ডা: মাহের করিম চৌধুরী বলেন, তিনি ঢাকায় যোগদান করেন। তাকে ঢাকা অফিস থেকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে এপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে সিলেট অফিসে যোগদান করার কথা বলেছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা ওই সময়ে তিনি আবেদন করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে ডা: মাহের করিম চৌধুরী বলেন, তার এই বিষয়ে কিছুই জানা নেই। নিয়োগের আগে লিখিত কিংবা ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ডা: মাহের করিম চৌধুরী বলেন, তেমন কিছু আমার লাগেনি। তবে জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান মাসুম ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুর রব এর কাছে মৌখিক সাক্ষাতকার দিয়েছেন।
তার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায় বলে জানান। তবে আব্দুর রব তার আত্মীয় নয় বলে জানান ডা: মাহের করিম।
এ ব্যাপারে বিমানের সিলেট জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান মাসুম দাবি করেন, তিনি সাক্ষাতকার নেয়ার কেউ নন। ডা: মাহের করিম চৌধুরী ঢাকা অফিসে যোগদান করে এসেছেন। আমরা তাকে যোগদান করিয়েছি, তিনি কোথায় পরীক্ষা দিয়েছেন না দেননি কিছুই আমার জানা নেই। আমি কারো ভাইভা নেইনি।
সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুর রব দাবি করেন, স্টেশন কমিটি কোন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন।
তাহলে স্টেশন কমিটির যাচাই বাছাইকৃত যাদের আবেদন ঢাকায় গিয়েছে সেটা এডমিন হিসেবে আপনার হাত ধরেই গিয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন-সেটা অনেক আগের ঘটনা। তবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডা: মাহের চৌধুরীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন।
আব্দুর রব-এর দাবি, এই নিয়োগ ঢাকা থেকে হয়েছে।
ডা: মাহের চৌধুরীর বাড়ি একই জেলায়। তবে তার আত্মীয় নন বলে তিনি দাবি করেন তিনি।
আব্দুর রব আরো দাবি করেন, ডা: মাহের চৌধুরী নিয়োগে সরাসরি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চিফ মেডিকেল অফিসার নিয়াগকারী কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চিফ মেডিকেল অফিসার তাসলিমা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
(মূল রিপোর্ট : সিলেটর ডাক)