‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে গেছেন ইলিয়াসপত্নী!

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ- ওসমানীনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজনা প্রশমন হতে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করছে- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন।

তবে লুনার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করা হবে এমন ইঙ্গিত করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ সিলেট-২ আসনে হুমায়ুন কবির যে প্রচারণা শুরু করেছিলেন সেটা ছিলো মূলতঃ এলাকার উন্নয়নভিত্তিক এবং এতে তিনি বিপুল সাড়া পেলেও তাকে আরো বড় পরিসরে কাজের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে তিনি নির্বাচন নাও করতে পারেন।

অন্যদিকে সিলেটের বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের সচেতন জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি এক আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সংযম ও দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, গত রবিবার সিলেট জেলার ৬টি আসনসহ বিভাগের ১৯টি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে কেন্দ্রে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় বিএনপির হাইকমান্ডের এ বৈঠকে সিলেটের সব মনোনয়নপ্রত্যাশীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সবার চোখ ছিলো সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-
ওসমানীনগর) আসনকে ঘিরে।

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও হুমায়ুন কবির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ফলে এই আসনকে ঘিরে অন্যরকম আলোচনা ছিলো সর্বত্র।

সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর কঠিন দুঃসময়ে একমাত্র রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়ে কর্মীরা যখন দিশাহারা, ঠিক তখনই কর্মীদের ছায়া হয়ে পাশে দাঁড়ান ইলিয়াসের সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনা। স্বামী ইলিয়াসের শুন্যতা পুরনে সিলেট-২ আসনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির হাল ধরে আছেন তিনি। রাজনীতিতে নিজেকে প্রমাণ করতে একের পর এক পরীক্ষা দিয়েই যাচ্ছেন । হামলা, মামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও তিনি নেতাকর্মীদের একত্রিত রেখেছেন। দুর্দিনে মাঠে ছিলেন, আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে স্থানীয়ভাবে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দুটোই তুলনামূলক বেশি।

দুই উপজেলায়ই অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছেন লুনার। তাছাড়া সাধারণ মানুষের মনে আছে এম ইলিয়াস আলীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা। নিখোঁজ হলেও ইলিয়াস আলীর রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। মাঠে তুলনামূলক নিজের অবস্থান শক্ত হলেও সর্বশেষ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। ইলিয়াস পত্নী।

অপরদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির মূলত প্রবাসী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তিনি এলাকায় এসে প্রচারণা শুরু করেন। তার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের নিয়ে মিছিল-মিটিং করছেন তিনি। এ নিয়ে দুই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এমনকি গত ৯ অক্টোবর রাতে বাসিয়া ব্রিজ এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনার পর থেকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছিলো বিএনপির হাইকমান্ড।

সূত্র দাবি করছে, তৃণমূল মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজনা মতামত ও রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে ধানের শীষ হাতে পাবেন লুনা। লুনার দীর্ঘ রাজনৈতিক উপস্থিতি, ইলিয়াস পরিবারের জনপ্রিয়তা ও সংগঠনের প্রতি ত্যাগ তাকে এগিয়ে নিয়েছে।

অন্যদিকে হুমায়ুন কবিরের প্রবাসী সংযোগ, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠতা এবং কেন্দ্রীয় লবিংয়ের প্রভাব ও বিবেচনায় এগিয়ে থাকলেও দু'জনের একজনকে মাইনাস করতে হবে দলীয় হাইকামন্ডকে।

সূত্র আরও জানায়- সেই দৃষ্টি থেকে বহুমাত্রিক যোগ্যতার কারণে হুমায়ুনকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এর ইঙ্গিতও মিলেছে তাহসিনা রুশদীর লুনার বক্তব্য থেকে। তিনি গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) সিলেটের বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের সচেতন জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি এক আবেগঘন আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সংযম ও দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা উল্লেখ করেন- ‘কাউকে অসম্মান করে কখনো নিজে সম্মানিত হওয়া যায় না।’

তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা দাবি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে লুনা বলেন, ‘এই বার্তাগুলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এটিই এখন নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। সময় নষ্ট না করে সবাই মিলে এই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করুন। ইনশাল্লাহ, সফল হবো আমরাই।’


(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)