কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও শনিবার (১ নভেম্বর) উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সিলেট বিভাগীয় সমবায় অফিস, জেলা সমবায় অফিস ও সিলেট সদর উপজেলা সমবায় অফিসের যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সরওয়ার আলম।
সিলেট বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের উপ-নিবন্ধক (প্রশাসন) বশির আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন তালুকদার এবং সিলেট সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সমবায় হলো পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যের প্রতীক। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় এটি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, “সমবায়ের মূল শক্তি হলো ঐক্য, শৃঙ্খলা ও বিশ্বাস। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রত্যেক নাগরিককে দায়িত্বশীল হতে হবে। সমবায় খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর ও উদ্ভাবনমুখী করে তুললে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. সরওয়ার আলম বলেন, “বর্তমান সরকার সমবায় খাতের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা ও নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে সমবায়গুলোকে টেকসই করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও স্বনির্ভর হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “সমবায় কেবল অর্থনৈতিক সংগঠন নয়, এটি একধরনের সামাজিক আন্দোলন। একে অপরকে সাহায্য করার মানসিকতা থেকেই প্রকৃত সমবায় গড়ে ওঠে। তরুণ প্রজন্মকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা সময়ের দাবি।”
স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সমবায় খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়ানো গেলে সমবায় আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন হলি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সম্পাদক ও সিলেট জেলা সমবায় ইউনিয়নের সম্পাদক নিয়াজ মো. আজিজুল করিম, ধনকান্দি সবুজ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্য লায়লা সুলতানা এবং গ্রিনলিফ কর্মচারী সমবায় সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ।
বক্তব্যে নিয়াজ মো. আজিজুল করিম বলেন, “সমবায় আন্দোলন শুধু আর্থিক উন্নয়নের মাধ্যম নয়, এটি সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতা ও ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়নের চর্চা গড়ে তোলে। ছোট উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে সমবায় খাত আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
লায়লা সুলতানা বলেন, “নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই সমবায় গড়া সম্ভব নয়। গ্রামের নারীরা যদি সঠিক প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পায়, তবে তারা নিজেরাই পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে।”
গ্রিনলিফ কর্মচারী সমবায় সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সমবায়ের মাধ্যমে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। তরুণ প্রজন্মকে এই চর্চায় যুক্ত করতে হলে ডিজিটাল সেবা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমবায় সমিতির সদস্য কারী শফিকুর রহমান। দিবসটি উপলক্ষে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক সমবায় সমিতির সদস্য ও কর্মকর্তা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তারা বলেন, এ ধরনের আয়োজন সমবায়ীদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার মনোভাব আরও জোরদার করে।