কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে সংসদ সদস্য পদে লড়বেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদিস আল্লামা নুর উদ্দিন আহমদ রাহ. গরহপুরি-এর ছেলে হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হয়ে রিকশা মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটের বালাগঞ্জে অনুষ্ঠিত উলামা-সুধী সমাবেশে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলটির আমির মাওলানা মামুনুল হক।
হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসুল আরাবিয়াহ-এর সহ-সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুর-এর মুহতামিম।
এর আগে সিলেট-৩ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুর মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম হাজীপুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনায় গতকাল প্রার্থী বদল করেছে জামায়াতের সঙ্গে আসন-সমঝোতায় থাকা দলটি।
শনিবার গহরপুর মাদরাসায় অনুষ্ঠিত উলামা-সুধী সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক উপস্থিত জনতা ও সিলেট-৩ আসনের জনসাধারণের কাছে মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজুর জন্য দোয়া এবং ভোট চান।
এ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে হাফিজ মাওলানা মুসলেহ রাজু আগামী নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে, গহরপুরিপুত্র মুসলেহ উদ্দিন সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। চলছে ভোটারদের মাঝে নতুন করে হিসাব-নিকাশ।
অনেকেই বলছেন- কওমি ঘরানার ভোট টানার পাশাপাশি বাবার তুমুল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু। বিষয়টি অন্যান্য প্রার্থীর জন্য অনেকটাই দুশ্চিন্তার।
উল্লেখ্য, সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার শিওরখাল মোল্লাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণকারী শায়খুল হাদিস আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরি রাহ. ছিলেন বরেণ্য বুজুর্গ। দেশ-বিদেশে ‘মুহাদ্দিস সাহেব’ ও ‘গহরপুরী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রখ্যাত বুজুর্গ, শাইখুল আরব ওয়াল আজম হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর একান্ত খাদেম ও শাগরেদ ছিলেন। সিলেটের জামিয়া গহরপুরসহ অসংখ্য মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আল্লামা নূর উদ্দীন। ইলমি ও আধ্যাত্মিকতায় পুরো উপমহাদেশে তাঁর অবস্থান ছিল অনন্য উচ্চতায়।
১৯৯৬ সাল থেকে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত প্রায় নয় বছর আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরি রাহ. কওমি মাদরাসাভিত্তিক সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া, বাংলাদেশ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি পাকিস্তান আমলে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা হিসেবে ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৬৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব পাকিস্তান’-এর গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্সে প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।
২০০৫ সালের ৬ এপ্রিল আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরি রাহ.-এর ইন্তেকাল হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু শায়খুল হাদিস আল্লামা নুর উদ্দিন রাহ. গরহপুরি-এর একমাত্র ছেলে।