শাবি’র ‘শহীদ রুদ্র সেন’ লেকে কী চলছে?

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ‘শহীদ রুদ্র সেন’ নামে একটি নান্দনিক লেক আছে। কিছু দিন আগেই প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা এই জলাধার এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ।

লেকটি একদিকে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, অন্যদিকে শহীদ রুদ্র সেনের আত্মত্যাগ স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা সুন্দর এ জলাধারের ক্ষতি করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি রাখার গ্যারেজ। যা একদিকে লেকের সৌন্দর্য নষ্ট করবে, অপরদিকে টাকার অপচয় হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অথচ গ্যারেজটির পাশে স্বাভাবিকভাবেই প্রায় শতাধিক গাড়ি রাখার মতো জায়গা খালি পড়ে আছে। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্যারেজ এ স্থান থেকে সরিয়ে পাশের এ খালি জমিতে স্থানান্তর করলেই সমস্যার সমাধান হয়। এটা না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে লেকের পাড় এবং স্থায়ীভাবে নষ্ট হবে এ জলাধারে সৌন্দর্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নির্মিতব্য দোতলা এ গ্যারেজটিতে মোট ২২টি গাড়ি রাখা যাবে। তবে গ্যারেজটিতে বড় যানবাহন নিয়ে যাবার রাস্তা খুবই সংকুচিত। এ কারণে ডিজাইন অনুযায়ী সেখানে গাড়ি পার্ক করতে গেলে ভরাট করতে হবে লেকের কিছু অংশ। এর ফলে নষ্ট হবে নান্দনিক এ স্থানটি।

এদিকে লাল শাপলায় ভরা লেকের পাড় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের আড্ডা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এছাড়া জলাধারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোসিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া অনেকের অভিযোগ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। এমনকি সেখানে ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেয় সেখানে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ কারণে লেকের পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, লেকের সৌন্দর্য আমাদের ক্যাম্পাসকে অনন্য করে তুলেছে। এখন এখানে গ্যারেজ হলে এই পরিবেশ একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ি ধোয়ার নোংরা পানি লেকে গেলে লাল শাপলা, মাছ ও জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া টিলাও কেটে ফেলা হচ্ছে। যা প্রকৃতির জন্য হুমকি স্বরুপ। এখন আবার শুনতে পাচ্ছি যে লেকের কিছু অংশ ভরাট করা হবে। ক্যাম্পাসে এত এত জায়গা থাকতে লেকের পাশেই কেন গ্যারেজ নির্মাণ করতে হবে এ প্রশ্ন আমাদের।

লেকের পাশে গ্যারেজ নির্মানকে প্রশাসনের হঠকারী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজি আতাহার বলেন, দেশের অসহায় দরিদ্র মানুষের টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট দেওয়া হয়। আমরা মনে করি – যেখানে-সেখানে গ্যারেজ নির্মাণ করে এ অর্থ অপচয় করা উচিৎ নয়। পাশে আরো অনেক খালি জায়গা রয়েছে, সেখানে নির্মাণকাজ করা হোক। বিপুল অর্থ ব্যয়ে এ কৃত্রিম জলাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন অন্য প্রকল্পের নামে এ লেকটি নষ্ট করলে, তা হবে জনগণের অর্থের অপচয়।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেন, এই লেকে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। এ জলাধারের পানিতে শাপলা ফুল ফুটে, শীতে অতিথি পাখি আসে। এছাড়া লেকের পাড়ের চারপাশে সবুজ গাছপালার সমাহার রয়েছে। যদি ঝলাধারটি ভরাট করা হয়, তাহলে এই জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে এবং ক্যাম্পাস তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে। একইসঙ্গে পাহাড় কাটা বন্ধ করাও জরুরি, এটা দেশের পরিবেশ আইনের পরিপন্থী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী জয়নাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, লেকের সৌন্দর্য বজায় রেখেই আমরা গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করব। পার্কিংয়ের জন্য জলাধারের কিছু জায়গা ভরাট করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টিলা কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা টিলা কাটিনি; তবে দুই-তিন ফুট কাটা হলে এর জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় না।

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগের কথা তুললে তিনি বলেন, কাজ করতে গেলে কিছু ভুল–ভ্রান্তি হয়ে থাকে। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে সেটা সংশোধনের দায়িত্ব আমাদের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, এখানে কেন্দ্রীয় গ্যারেজ নির্মাণের জন্য আগের প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। তখন সেটা গৃহীত হয়নি। এরপর এ স্থানে লেক খনন করা হয়। আমাদের নতুন প্রশাসন আসার পর মন্ত্রণালয় সেই কাজটির অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী ডিপিপি যে জায়গা নির্বাচন করে দেয়, সেখানেই সেটা নির্মাণ করতে হয়। তাই আমরা জায়গা পরিবর্তন করতে পারিনি।


(মূল রিপোর্ট : আমার দেশ)