- শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে উচ্ছ্বাস
কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
দীর্ঘ ৭ বছর পর খুলেছে সিলেটের পাথররাজ্যের দুয়ার। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক আদেশে সিলেট বিভাগের কোয়ারিগুলো থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে। এতে কোয়ারি-সংশ্লিষ্ট অন্তত ১০ লাখ শ্রমিকসহ অন্যদের মাঝে উচ্ছ্বাস বইছে।
এদিকে, সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো উন্মোক্ত হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের জোরালো দাবির পাশিপাশি রয়েছে আলেম-সমাজেরও অবদান।
জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ১৪ সেপ্টেম্বর কোয়ারিগুলো সচলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বৃহত্তর সিলেট পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতিবিনিময় করে।
ওই দিন দুপুরে ইসলামী আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময়ে বক্তব্য রাখেন দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি এসময় বলেন- ‘সনাতন পদ্ধতিতে পাথর আহরণের জন্য কোয়ারি খুলে দিলে লাখো মানুষের জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিগত সরকারের মদদপুষ্ট একটি দুষ্টচক্র ও চিহ্নিত সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ ইশারায় সিলেটের লাখ লাখ মানুষের রোজগারস্থল পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোয়ারি বন্ধ করে দিয়ে এই চক্র রিজার্ভের ডলার দিয়ে ব্যাপকভাবে পাথর আমদানি করে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে। স্থানীয় পাথর কোয়ারিতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করে পাথর আমদানির ফলে আমাদের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়।’
পরবর্তীতে তিনি সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শনও করেন।
পরিদর্শনকালে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন- ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথম মতিবিনিময়কালে বলেছি যে, ভারতের চক্রান্তে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরিবেশ নষ্টের অজুহাতে সরকার ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ভারতের দালালরা পতিত আওয়ামী সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে দেশকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বন্ধ থাকা সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি শীঘ্রই খুলে দিতে হবে।’
পরিদর্শনকালে মুফতি ফয়জুল করীম আরও বলেন- দ্রুত কোয়ারিগুলো খুলে না দিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।’
তবে আন্দোলনের প্রয়োজন হয়নি, জনদাবিকে মূল্যায়ন করে হাসিনার পতনের ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই কোয়ারিগুলো খুলে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জানা গেছে, সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরিনা আফরিন মোস্তফা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বের আদেশটি বাতিল করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত পত্রসমূহের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সারা দেশে গেজেটভুক্ত কোয়ারিসমূহের ইজারা কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে এ বিভাগের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখের ২৮.০০.০০০০.০২৮.৩১. ০০৪.১৮.১২ (অংশ-১)-১৯ নম্বর স্মারকে, “সারা দেশের গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি, সিলিকাবালু কোয়ারি, নূরীপাথর, সাদা মাটি উত্তোলনসহ অন্যান্য সকল কোয়ারির ইজারা আপাতত: বন্ধ থাকবে” মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্তটি, এতদ্বারা নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো। এতে করে সিলেটসহ সারা দেশে বন্ধ থাকা সকল পাথর ও বালু মহাল থেকে পাথর, বালু, সাদামাটি উত্তোলনে আর বাধা রইল না।
এর আগে ২০১৮ সালে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয় কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন। দীর্ঘদিন এভাবে থাকায় কোয়ারি-নির্ভর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। ব্যবসায়ীরা হয়ে যান দেউলিয়া। শ্রমিকরা যাপন করতে থাকেন মানবেতর জীবন।
অবশেষে তাদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।
শীঘ্রই গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারিগুলোর ইজারা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।