এমসি কলেজের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গঠন

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটের এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শিবির কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে তদন্ত কমিটি। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিলেট মহানগরের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ১০১ নং রুমে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমান রিয়াদকে লোহার রড দিয়ে শিবির কর্মীরা মারধর করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মিজানুরের অভিযোগ- এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লোকমান মুসান্নার উপস্থিতিতে তাকে মারধর করা হয়েছে।

তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছে ছাত্রশিবির।

মিজানুর রহমান রিয়াদ বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি ‘বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার’ এমসি কলেজ শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র জুনেদ আহমদ জানান, রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পান। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে রিয়াদকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলেন।

হামলাকারীরা রিয়াদকে জিজ্ঞেস করেন- কুয়েটের ঘটনায় তুই শিবিরকে নিয়ে কী লিখেছিস। কোনো উত্তরের তোয়াক্কা না করেই তাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন শিবিরকর্মীরা। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। রিয়াদের রুমমেট জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। দরজা লাগিয়ে রড দিয়ে বেধড়ক পিঠানো হয় রিয়াদকে।

এক পর্যায়ে শিবিরের কর্মী আদনান বলেন- তুই পরে যে অপবাদ দিবি, আগেই সেটি করে নেই। এই বলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিয়াদের পায়ের রগ কাটার চেষ্টা করেন আদনান। এসময় রুমের বাইরে থাকা জুনেদের চিৎকারের ছাত্রাবাসের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও কর্মচারী জড়ো হন। পরে শিবিরের নেতাকর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদকে রুমের বাইরে টেনে বের করে ফেলে চলে যান।

শিবির নেতাকর্মীরা যাওয়ার সময় ১০১ নং রুমে তালা দিয়ে রিয়াদ ও জুনেদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যান।

রিয়াদের সহপাঠীরা জানান- মিজানুর রহমান রিয়াদ জুলাই বিপ্লবের সক্রীয় কর্মী ছিলেন। কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি নিউজের কমেন্টে লিখেন- কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম। দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাটিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন তাহলে এই ত্যাগের মূল্য কী?

রিয়াদের এই কমেন্ট এমসি কলেজ শিবিরের নজরের আসে। এরপরই তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। 

এ বিষয়ে শিবিরের সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি শাহিন আহমদ কওমি কণ্ঠকে বলেন- ঘটনাটির সঙ্গে ছাত্র শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অহেতুক দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

শাহপরাণ থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান কওমি কণ্ঠকে বলেন- আমাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। করলে আইনানুগ ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন- আমরা হাসপাতালে গিয়ে আহত ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছি। তার শারীরিক অবস্থা আগের থেকে ভালো। ঘটনার তদন্তে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন।