‘শিবিরের চাপে’ জামায়াতের বক্তব্য পরিবর্তন!

  • এমসি কলেজের হোস্টেলে তালামীয নেতাকে মারধর

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে তালামীয নেতার উপর হামলার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কিছু কর্মী জড়িত বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন  সিলেট মহানগর জামায়াত ইসলামীর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করতে আহ্বানও করেছিলে শিবির ও তালামীযের প্রতি।

তবে ‘শিবিরের চাপে’ একদিন পরই নিজের এ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন এই জামায়াত নেতা। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান রিয়াদ নামে এক ছাত্রের উপর হামলা হয়। তিনি তালামীযে ইসলামিয়ার কলেজ শাখার সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক। শুরু থেকেই রিয়াদ ও তার সহপাঠীদের অভিযোগ, কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।

অপরদিকে, শিবিরও শুরু থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

ঘটনার পর পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে ও উত্তপ্ত- তখন মীমাংসার লক্ষ্যে রোববার সন্ধ্যায় আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সাথে বৈঠকে বসেন জামায়াতের সিলেটের শীর্ষ নেতারা।

ওই বৈঠক শেষে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির সংবাদমাধ্যমকে বলেন,  ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে (এমসি কলেজে) যে বাড়াবাড়িটুকু হয়েছে, আমাদের দৃষ্টিতে সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছুসংখ্যক কর্মী এটার সাথে জড়িত। এবং যেটা করেছে সেটা অন্যায়ভাবে করেছে এবং সেটা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। দুঃখপ্রকাশ করছি।

মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ওই সময় বলেন- শিবির ও তালামিয দুটিই আমাদের ভালোবাসার সংগঠন। এই দুটি সংগঠনের মধ্যে এমসি কলেজে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আজকে আমরা বসেছিলাম। আমরা পরষ্পরই ইসলামী সংগঠন আমরা দেশ ও জাতির ভালো চাই। নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হলে বিরোধীপক্ষ উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে আর কোন এ ধরণের ভুলবুঝাবুঝি তৈরি হয় আমরা পরষ্পর বসে এ ব্যাপারে মীমাংসার দিকে যাবো। কোন কর্মীও যেনো বাড়াবাড়ি না করে।

তবে সোমবার রাতে নিজের এই অবস্থান থেকে সরে এসে গণমাধ্যমে আরেকটি বিবৃতি পাঠান মহানগর জামায়াতের আমির।  

এতে বলা হয়- ‘গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট ভুল বুঝাবুঝি নিরসনে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। এতে তিনি বলেন- গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদ ও জাহিদুল ইসলাম হৃদয়সহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃষ্ট মারামারির ঘটনায় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান খবর ছড়িয়ে পরে। যা সিলেটের সমাজ ও রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এরূপ অবস্থায় সিলেটের রাজনীতির পারস্পরিক সহাবস্থানের ঐতিহ্য রক্ষা করতে গতকাল (রোববার) আমরা জামায়াতের কয়েকজন দায়িত্বশীল আনজুমানে আল ইসলাহ নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে মিলিত হই। বৈঠক শেষে আমি ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করি তা যথাযথ তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ছিলো না’।”
 
বিৃতিতে ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আমি আশা করবো তদন্ত কমিটি যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন এবং তদন্তের মাধ্যমে যে বা যারা দোষী সাব্যস্থ হবে তার বিচার নিশ্চিত হবে। বৈঠকে সৃষ্ট বক্তব্যে যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় জামায়াত আমির এমসি কলেজে হামলার ঘটনায় শিবিরের সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করে বক্তব্য প্রদানে পর রাতে শিবির এক বিবৃতি দিয়ে ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।  

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ এবং মহানগর সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলেন- ‘সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। রোববার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের প্রদত্ত একটি বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতিমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমিরও এ অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। আমরা অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

শিবিরের এই কঠোর অবস্থানের পরই মহানগর জামায়াতের আমির নিজের আগের দিনের বক্তব্য থেকে সরে আসেন সোমবার। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিবিরের একটি সূত্র কওমি কণ্ঠকে জানিয়েছে- এমসিকাণ্ড নিয়ে শিবির ও জামায়াতের মাঝে ফাটল ধরেছে। অন্তর্দ্বন্দ্ব থামাতে কেন্দ্রের নির্দেশে মহানগর জামায়াত আমির বক্তব্য পরিবর্তন করে সোমবার রাতে বিবৃতি প্রদান করেছেন।