কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
চব্বিশের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক ক্ষেত্রেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। একটি অভ্যুত্থান যেন সবাইকে বিদ্রোহী করে তুলেছে। প্রায় সবাই করছে অন্যায়ের প্রতিবাদ। এই চিত্র দেখা গেলো গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার এলাকায়। ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেন চাঁদাবাজ এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে।
এই আন্দোলনের মুখে ওই রাতেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত সেই নেতাকে (বহিষ্কৃত) গ্রেফতারও করে পুলিশ। তবে তাকে গ্রেফতারের পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন তার সহযোগিরা। এবার ওই চাঁদাবাজের সহযোগিদেরও হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন জয়দীপ চৌধুরী মাধব (৩৮)। বাড়ি সিলেট মহানগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের পার্শ্ববর্তী দাড়িয়াপাড়ায়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি তার বাহিনী নিয়ে বন্দর ও জিন্দাবাজার এলাকায় তৈরি করেন আধিপত্য। গড়ে তোলা বাহিনী নিয়ে করছিলেন চাঁদাবাজি।
এক সময়ের পুরানলেন গ্রুপের নেতা মাধব সম্প্রতি গ্রুপ বদল করে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে বন্দর ও জিন্দাবাজার এলাকার হকারদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করতেন তিনি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার)সন্ধ্যার পর এক হকারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় হকাররা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। মাধবকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন। এরপর যুবদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাজল মিয়া। মামলা দায়েরের পরপরই গ্রেপ্তার এড়াতে সিলেট ছেড়ে পালান মাধব।
রোববার (২ মার্চ) সকালে তাকে সুনামগঞ্জ জেলাপুলিশের সহায়তায় ওই জেলার শান্তিগঞ্জ থানার দেবকুনা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানাপুলিশের একটি দল।
গ্রেফতারের পর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান- সিলেটের বন্দরবাজার এলাকা থেকে চাঁদার জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজল মিয়া নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে তুলে নিয়ে যান মহানগর যুবদলের সদ্যবহিষ্কৃত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দীপ চৌধুরী মাধব ও তার লোকজন। এসময় এ ব্যবসায়ীকে জিন্দাবাজার এলাকায় নিয়ে গিয়ে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করে ও আরো ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ব্যবসায়ী কাজলকে মারধরও করা হয় এসময়।
এ ঘটনায় পরে কাজল বাদী হয়ে মাধবকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি হিসেবে রোববার সকালে কোতোয়ালি থানার একটি দল সুনামগঞ্জ জেলাপুলিশের সহায়তায় শান্তিগঞ্জ থানার দেবকুনা গ্রাম থেকে মাধবকে গ্রেফতার করে।
এদিকে, মাধবকে গ্রেফতার করা হলেও তার সহযোগিরা এখনো অধরা। ব্যবসায়ী কাজলের দায়েরকৃত মামলায় সাকিব নামে একজনকে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৭/৮ জনকে। বাকি সবাইকে খুঁজছে পুলিশ।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকালে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক কওমি কণ্ঠকে জানান- মাধবকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলো পুলিশ। তবে বিজ্ঞ বিচারক সে আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
ওসি আরও বলেন- এজাহারভুক্ত সাবিকসহ বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।