নবগ্রাম ধনপুর ইবতেদায়ীতে নানা সংকট, দেখার কেউ নেই!

  • ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকদের পাঠদান

মোফাজ্জল হক :

শিক্ষাক্ষেত্রে বিগত দশকের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ অগ্রগতি লাভ করলেও তিন দশকের বেশি সময়েও শিক্ষায় বৈষম্য কাটেনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের হাওরপাড়ের হতভাগ্য মানুষদের। 

দেশের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে আকাশচুম্বী অট্টালিকা সমতুল্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও পুরোনো ভাঙা কাঠের টেবিলে মাটির মেঝেতেই তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনা বেতনে চলছে নবগ্রাম ধনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম। সরকারিভাবে বছরের পর বছর বেতন-ভাতা কিংবা শিক্ষা উপকরণ না থাকায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যেবাহী মাদ্রাসাটি।

এটি ১৯৮৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন পরবর্তী সময়ে ধনপুর, চন্ডিপুর, নাচনী, চন্দ্রপুর, নয়াগাঁও ও সন্তোষপুরসহ প্রায় ৬টি এলাকার শিক্ষার্থী পাঠদান করে আসছে। এই ৬টি এলাকায় অন্য কোনো ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষক সংকটে বন্ধের উপক্রম হয়েছে মাদ্রাসাটি। বর্তমানে মাদ্রাসায় ১৫৭ জন শিক্ষার্থী ও ৫জন শিক্ষক রয়েছেন। এলাকাবাসীর দান ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমেই চলছে মাদ্রাসাটি। ২০২২ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসায় উপবৃত্তি চালু থাকলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ থাকায় দারিদ্র্য শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। 

জানা যায়, ধনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মাও. রুকুন উদ্দিন। জীবনের তিন দশক মাদ্রাসার জাতীয়করণের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিলেও আশার আলো দেখেননি তিনি। মাদ্রাসার জাতীয়করণের স্বপ্ন নিয়ে ২০২০ সালে মারা যান তিনি। বর্তমান শিক্ষকদের দাবি, মাদ্রাসাটি জাতীয়করণ করা হলে ৬টি এলাকার মানুষের শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করেন তারা। ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাটি দীর্ঘদিন জাতীয়করণ করার দাবি জানিয়ে আসছেন ৪টি গ্রামের মানুষও। এলাকার মানুষের দাবি, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী এই মাদ্রাসাটিতে সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় দিনদিন শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার পর প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক দূরের মাধ্যমিক কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  ভর্তি করাতে চান না বলেও দাবি করেন তারা।  উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ঐ এলাকার  দারিদ্র্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা ও পর্যাপ্ত মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রায় ৮০শতাংশ নারী শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষার আগেই ঝড়ে পড়েন। 

এ বিষয়ে সরমঙ্গল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস ছামাদ বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি এই মাদ্রাসাটি জাতীয়করণ করার। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর হয়ে গেলেও এখনো শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাচ্ছে না। আমরা চাই অতিদ্রুত যেন মাদ্রাসাটি যেন জাতীয়করণ করা হয়।'

মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষক মাও. মোকাররম ইবনে রুকন বলেন, 'বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার আমাদের এই হাওরাঞ্চলের মানুষ। আমরা বাল্যকাল থেকে দেখি আসতেছি এই মাদ্রাসার শিক্ষককরা কতটা অবহেলিত।' তিনি আরও বলেন, ' দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এটা অনেক অমানবিক। পরবর্তীত  বাংলাদেশে এই এলাকার মানুষ আর বৈষম্য চায় না। আমরা চাই মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও সরকার শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো।