দুদিনে সিলেটের আলোচিত যত ঘটনা

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সোম ও মঙ্গলবার (৭ ও ৮ এপ্রিল) ঘটনাবহুল এই দুটি দিন পার করেছেন সিলেটবাসী। ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সারা দেশের চোখ ঘুরে যায় সিলেটের দিকে। হঠাৎ করে আলোচনায় থাকা সিলেটের দুদিনের (সোম ও মঙ্গলবার) গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো কওমি কণ্ঠ’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

ইসরাইলবিরোধী ঐতিহাসিক বিক্ষোভ :
ফিলিস্তিন ভাসছে নিজের ভাইয়ের রক্তে। মা-বোন-সন্তানদের আকাশভাঙা কান্নায় দিন-দুপুরে অমাবশ‍্যা গাজা-রাফায়। হাজারো মাইল দূরে হলেও এই অবস্থায় কি ঘরে বসে থাকা যায়!

তাইতো সিলেটের রাস্তায় নেমে আসলেন মুসলিম আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। উঠলেন গর্জে, সিলেট পরিণত হলো হলো মিছিল-বিক্ষোভের শহরে।

ফিলিস্তিনে খুনি রাষ্ট্র ইসরায়েলের অবিরাম বর্বর হ‍ত‍্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) সিলেটে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন সর্বস্তরের মুসলিম জনতা।

বেলা ১১ টা থেকে মহানগরের চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন তাওহিদি ও ছাত্রজনতা। জোহরের নামাজের পরে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় পুরো চৌহাট্টা এলাকা।

অপরদিকে বাদ জোহর মহানগরের বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে বন্দরবাজারে আসতে থাকেন মানুষজন। এসময় মিছিল-স্লোগানে প্রকম্পিত হয় যেন পুরো সিলেট।

বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন, জমিয়ত, আইনজীবি ফোরাম, আঞ্জুমানে আল ইসলাহ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মিলিত হন বন্দরবাজারে। পরে সেখান থেকে সবাই জড়ো হন চৌহাট্টায়।

বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে বক্তারা খুনি রাষ্ট্র ইসরাইলের শাস্তি দাবি করেন জাতিসংঘের কাছে। এছাড়া মজলুম ফিলিস্তিনবাসীর জন্য সাহায্য কামনা করে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করেন সবাই।
বক্তারা বলেন- আমরা সবাই হয়তো ফিলিস্তিনে গিয়ে জিহাদ করতে পারবো না। কিন্তু ইসরাইলি পণ্য বয়কট করে এই জিহাদে শরিক হতে পারবো। তাই এখনই আমাদেরকে খুনি রাষ্ট্রের সব পণ্য বর্জনের কঠিন শপথ নিতে হবে।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত চৌহাট্টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় চৌহাট্টার চারদিকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত ছিল মিছিলের দীর্ঘ সারি।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগেরই মাথায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ লেখা কাপড় ছিল। শরীরে জড়ানো  ফিলিস্তিনের পতাকা। এছাড়া হাতে ফিলিস্তিন এবং বাংলাদেশি পতাকাও ছিল।

বিক্ষোভের সুযোগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুষ্কৃতকারীদের হামলা :
সর্বস্তরের জনতার বিক্ষোভের সুযোগে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে সিলেট মহানগরে কেএফসি রেস্টুরেন্ট, বাটা, ইউনিমার্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে একদল দুষ্কৃতকারী। পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান ও রেস্টুরেন্ট যেখানে কোক ও পেপসি আছে সেখানে ভাঙচুর করা হয়েছে।

জানা গেছে, চৌহাট্টায় বিক্ষোভকালে একদল দুষ্কৃতকারী দরগাহ গেইট ও জিন্দাবাজার এলাকার বাটা জুতার শো-রুম ও আম্বরখানা এলাকাস্থ ইউনিমার্টে ভাঙচুর করে। এসময় বাটার শো-রুমের গ্লাস ভেঙে ভেতরে ঢুকে সেখান থেকে জুতা লুটপাট করা হয়। তাছাড়া কিছু জুতায় আগুনও ধরিয়ে দেয়া হয়।

ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে ভাঙচুর করা হয় নয়াসড়ক এলাকায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্টেও। ওই ভবনে থাকা আরো ২টি রেস্টুরেন্টেও একই ঘটনা ঘটে। আসবাবপত্র ও গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়।

এ ছাড়াও কোক রাখার জন্য জালালাবাদ এলাকার ফুলকলি ও চৌহাট্টাস্থ আলপাইন রেস্টুরেন্টসহ মহানগরের বিভিন্ন এলাকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে হামলা চালানো হয়। এসব দোকান থেকে কোক, পেপসি, ফান্টাসহ বিভিন্ন পণ্য ইসরায়েলি দাবি করে ভেঙে নষ্ট করে ফেলা হয়।

তাছাড়া একদল লোক আম্বরখানাস্থ চায়না মার্কেটে কয়েকটি মোবাইল ফোনের দোকানে হামলার চেষ্টা করে। তবে এসময় স্থানীয়রা তাদের প্রতিরোধ করেন।

ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৭ জন কারাগারে :
ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৭ জনকে আটকের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
 
পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এসএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, হামলা ও লুটপাটে জড়িতদের মধ্যে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টহল ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে নজরদারিও চলছে।

কারাগারে যাওয়া ১৭ জন হলেন- সিলেট মহানগরের কাজীটুলা এলাকার মো. রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন (১৯), একই এলাকার আরব আলীর ছেলে ইমন (১৯), দ্বীন ইসলামের ছেলে মো. রাকিব (১৯), সাদ আহমদের ছেলে মিজান আহমদ (৩০), সওদাগরটুলা এলাকার মৃত আবুল বাশার মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল মোতালেব (৩৫), গোয়াইটুলা এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে সাব্বির আহমদ (১৯), সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ফরিদ মিয়ার ছেলে জুনাইদ আহমদ (১৯), মহানগরের মিরের ময়দান এলাকার মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে মো. রবিন মিয়া (২০), শাহী ঈদগাহ এলাকার মো. মহছন আহমদের ছেলে মোস্তাকিন আহমদ তুহিন (১৯), দরগাহ গেইট এলাকার আব্দুল ছাত্তারের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৩০), শেখঘাট এলাকার শামীম আহমদের ছেলে মো. রিয়াদ (২৪), বালুচর নতুন বাজার এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে মো. তুহিন (২৪), বটেশ্বর বাজারের সেলিম রেজার ছেলে আল নাফিউ (১৯), নোয়াখালী জেলার চাদমিল থানার পশ্চিম নাহার কিল গ্রামের সৈয়দ আলতাফ মানিকের ছেলে সৈয়দ আল আমিন তুষার (২৯), সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে মো. সোহেল খান (৪২), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সিদ্দরপাশা গ্রামের শাহ নূর মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া রুপন (৩৫) ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার জানাইয়া গ্রামের মৃত নন্দন মালাকারের ছেলে অরুন মালাকার (৩৫)।

পুলিশ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লুটপাটের ভিডিও পর্যালোচনা করে আরও জড়িতদের আটক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি করবে না সিলেটের ফিজা ও বনফুল :
কোনো প্রকার ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে সিলেটে মিষ্টান্ন ও ভোগ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা এন্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড ও বেকারি এবং মিষ্টি প্রস্তুতকারী বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি।

পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফিজার জেনারেল ম্যানেজার ইতেসাম মাবরুর ও বনফুলের মহাব্যবস্থাপক আমানুল আলম মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

ফিজার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে কোক ও পেপসি কোম্পানীর সকল প্রকার পণ্যসহ ইসরাইলি যাবতীয় পণ্য সামগ্রী ফিজার সকল শোরুমে প্রদর্শন ও বিক্রয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফিজা এন্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ইতেসাম মাবরুর বলেন, আমরা এখন ইসরায়েলী সব কোমল পানীয় আমাদের সব  শোরুম থেকে সরিয়ে নিয়েছি। পর্যাক্রমে বিকল্প পণ্য এনে বাকি সকল পণ্যও সরিয়ে দেওয়া হবে।

অপরদিকে বনফুল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- নির্বিচারে গণহত্যা সংগঠিত করার প্রতিবাদে সোমবার থেকে কোকাকোলা, পেপসিসহ সব প্রকার ইসরায়েলি পণ্য বনফুল শোরুমে প্রদর্শন বিক্রয় ও মজুতকরণ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।

দক্ষিণ সুরমায় টিলা ধসে শ্রমিকের মৃত্যু :
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় টিলা ধসে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর পশ্চিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শ্রমিকের নাম সুমন আহমদ (৩০)। তিনি সিলাম ইউনিয়নের রুস্তমপুর টিলাপাড়ার রজব আলীর ছেলে।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে মোহাম্মদপুর পশ্চিম পাড়ায় টিলার মাটি কেটে গাড়িতে তোলার সময় পার্শবর্তী একটি টিলা ধসে পড়লে মাটিচাপা পড়েন সুমন। এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।