কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার এসএসসিতে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৮৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।
সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে কয়েকটি নির্দেশনা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)।
এসএমপি কমিশনার বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান- ২০২৫ সালের এসএসসি/ভোকেশনাল/দাখিল পরীক্ষা উপলক্ষ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন ৪৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে জনসমাবেশ, মিছিল, গান-বাজনা, ঢাকঢোল বাজানো, লাউড স্পিকার ব্যবহার, অস্ত্র-শস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, ছোরা বা লাঠি বহন, বিস্ফোরক দ্রব্য, ইট পাথর ইত্যাদি বহণ ও ব্যবহারসহ শান্তি-শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ সব ধরনের কাজ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
পাশাপাশি প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রকে পরীক্ষা চলাকালীন অস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে এসএমপি।
এই নির্দেশনা ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত পরীক্ষা চলাকালীন প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
নির্দেশনা লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে এসএমপি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬টি থানার আওয়তাধীন ৪৪টি পরীক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে- সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রসময় মেমোরিয়াল হাইস্কুল, দি এইডেড হাই স্কুল, পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয়, পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়, কাজী জালাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজা জি সি উচ্চ বিদ্যালয়, ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়, রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, জামেয়া রহমানিয়া তায়িদুল ইসলাম, শাহজালাল জামেয়া ইসলামীয়া কামিল মাদ্রাসা, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজ, বাদাঘাট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, আম্বরখানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, আব্দুল গফুর ইসলামীয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, এয়ারপোর্ট উচ্চ বিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাস উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাউথ সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদ মকন উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, লালাবাজার দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়, জালালাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, লালাবাজার ফাজিল মাদ্রাসা, নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়, জালালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, রেবতী রমন দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়, ইছরাব আলী দ্বি পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়, জালালপুর উচ্চ বিদ্যালয়, জহির-তাহির মেমেরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, রেঙ্গা হাজিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, আল আমিন জামিয়া ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, হযরত শাহজালাল (রহ.) উচ্চ বিদ্যালয়, সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়, শাহপরাণ (রহ.) উচ্চ বিদ্যালয়, শাহজালাল উপশহর হাইস্কুল, শাহজালাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইউসেফ হাফিজ মজুমদার সিলেট টেকনিক্যাল স্কুল, সিলেট ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এবং জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল।
উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় এবার সিলেট বোর্ডে পরীক্ষার্থী কমেছে ৬ হাজার ৭৮২ জন। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৫৮০ জন। সিলেট শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ আহাম্মেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
পরীক্ষার সরঞ্জামাদি কেন্দ্র সমূহে পাঠানো হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের গুজবমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১০ এপ্রিল থেকে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এবারের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রসংখ্যা হচ্ছে ৪২ হাজার ৫৩ জন এবং ছাত্রী ৬০ হাজার ৮১৯ জন। এবারের ছাত্র পরীক্ষার্থীর চেয়ে ১৮ হাজার ৭৬৬ জন ছাত্রী বেশি।
এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীয় অংশ গ্রহণ করবে ২৩ হাজার ৮৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্য ৯ হাজার ৬৭৯ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ১৪ হাজার ১৯১ জন। মানবিক বিভাগের ৭১ হাজার ৫১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ২৮ হাজার ৬৬১ জন এবং ছাত্রী ৪২ হাজার ৮৫৮ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৭ হাজার ৪৮৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৭১৩ এবং ছাত্রী ৩ হাজার ৭৭০ জন।
জেলাভিত্তিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে সিলেটে ৪০ হাজার ৯৭৯ জন। তার মধ্যে ছাত্র ১৭ হাজার ১০৯ জন ও ছাত্রী ২৩ হাজার ৮৭০ জন।
মৌলভীবাজারে ২২ হাজার ২৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৮ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ১৩ হাজার ৩৬৪ জন।
সুনামগঞ্জে ২১ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৮ হাজার ৮৯৪ জন ও ছাত্রী ১২ হাজার ৫০১ জন।
হবিগঞ্জ জেলার ১৮ হাজার ২৬৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৭ হাজার ১৭৯ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৮৪ জন।
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য ৬টি অভ্যন্তরীণ ভিজিল্যান্স টিম ও কলেজ শিক্ষকদের সমন্বয়ে ১৯টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। গত বারের চেয়ে দুটি কেন্দ্র বেড়ে এবার কেন্দ্র সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৪টি। এর মধ্যে সিলেটে ৬০, সুনামগঞ্জে ৩৫, মৌলভীবাজারে ২৬ ও হবিগঞ্জে ৩৩টি কেন্দ্র রয়েছে। গত বারের চেয়ে এবার দশটি প্রতিষ্ঠান বেড়ে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪৫টি। এর মধ্যে সিলেটে ৩৬১টি, সুনামগঞ্জে ২২৬টি, মৌলভীবাজারে ১৯০টি ও হবিগঞ্জে ১৬৮টি কেন্দ্র রয়েছে।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ আহাম্মেদ জানান, পরীক্ষা অবাধ সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে সম্পন্ন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া ১২ দফা নির্দেশনা মেনে কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করা, পরীক্ষা কেন্দ্রের ২শ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা বলবৎ, শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের মোবাইল, মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম ও পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবহারের অনুমতিবিহীন যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ রাখা, কেন্দ্রসচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন (স্মার্ট ফোন ছাড়া বাটন মোবাইল) বা অননুমোদিত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। সেই সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের ফটোকপি মেশিন পরীক্ষা চলাকালীন বন্ধ থাকবে।