মো. রেজাউল হক ডালিম :
আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের দু:শ্বাসনের যবনিকাপাত গত ৫ আগস্ট ঘটেছে ছাত্র-জনতার জান বাজি রাখা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রায় সব নেতা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন জনতার রোষাণলের কারণে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা পালিয়েছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। শেখ হাসিনাও সে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিশেষ করে সিলেট জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানকার প্রায় সব নেতা ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে পালিয়ে গিয়ে ভারত আশ্রয় নিয়েছেন, থাকছেন অবৈধভাবে। তবে সেখানে গিয়েও তারা ‘শান্ত’ থাকছেন না, জড়াচ্ছেন অপরাধে।
ভারতেও ধর্ষণ, চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে শনিবার দিবাগত (৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সিলেটের ৪ নেতাকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা ও শিলং পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। বাকি ৩ জন হলেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সহসভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন।
এছাড়া এসব অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসার আজিজ এবং সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিটুও আসামি। তবে তাদের এখনো ধরতে পারেনি সেখানকার পুলিশ। গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, অভিযুক্তরা ৫ আগস্ট পালিয়ে গিয়ে ভারতের শিলং শহরে একটি হোটেলে অবস্থান নেন। পরে তারা হোটেল ছেড়ে এই শহরেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। গত ৫ নভেম্বর তারা শিলং ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে একটি বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। তবে শনিবার দিবাগত রাতে কলকাতা ও শিলং পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ওই বাসা থেকে নাসির খান, ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, আলম খান মুক্তি ও আব্দুল লতিফ রিপনকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে মেঘালয়ের ডাউকি থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় পুলিশ।
এছাড়া আরেকটি সূত্র জানায়, শিলংয়ে যে বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন- সেখানে এক নারী ধর্ষিত হয়েছেন। সেই ঘটনায়ও তারা অভিযুক্ত।
ডাউকি পুলিশ স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ‘এই ৬ জনের বিরুদ্ধে ভারতের বিদেশি আইনের ধারায় (১৪) মামলা হয়েছে। এ ধরায় ভারতে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধান লঙ্ঘনের শাস্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। সেগুলোর মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করা, বৈধ নথি ছাড়া দেশে প্রবেশ করা, অথবা নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া অন্তর্ভুক্ত।’
এদিকে, অন্য একটি সূত্র বলছে- ভারতের ডাউকিতে ট্রাক চালকদের উপর হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে এই চারজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্তকাজের জন্য তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘তাদেরকে (অভিযুক্ত ৬ জন) শিলংয়ের ডাউকি থানার একটি মামলায় (নম্বর- ১৯/১০/২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় আইনজীবীদের মাধ্যমে অভিযুক্তদের আইনি সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি তারা সুবিচার পাবেন।’