সিলেটে দু’দিনব্যাপী জলবায়ু মেলার উদ্বোধন

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটে দুই দিনব্যাপী জলবায়ু মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় এবং ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ বাস্তবায়িত ইকরা প্রকল্প ও ইয়ুথনেট গ্লোবাল’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জলবায়ু মেলা-২০২৫-এর উদ্বোধন করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসন সিংহ।  
এ উপলক্ষ্যে বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন- বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রত্যেক ঋতুর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য আছে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এখন অন্যান্য ঋতুর বৈশিষ্ট্য কমছে। এখন কেবল গ্রীষ্মকালের দেখা মেলে, শীতকাল ছোট হচ্ছে ক্রমশ। গেল বছর তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিলো। ঠিক একইভাবে এবছরও গরম বেশি লাগছে। আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা মরুভূমিকরণের পথে এগোচ্ছি আমাদেরই সৃষ্ট কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে ছোটবেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব আশঙ্কার কথা বলা ছিলো বই পু্স্তকে, তা আজ বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ, বনভূমি ধ্বংস, পহাড় টিলা অবাধে কেটে উজাড় করার মাধ্যমে আমরা যেভাবে পরিবেশটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছি, এর খেসারত আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে হবে। জাফলং, বিছনাকান্দির মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা যেখানেই পিকনিকে যাই, সেই স্থানে খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতল ফেলে নোংরা করে আসি। আমাদের এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা প্রকৃতিকে যে কি পরিমাণ অত্যাচার করি, সেটা নিজেরাও জানি না। তাই প্রকৃতিও তার প্রতিশোধ নেয়। খরা, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙন, টিলাধ্বসের মতো ঘটনা আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে। তাই আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বায়ুদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণসহ সকল প্রকার পরিবেশ দূষণ রোধে একসাথে কাজ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় বর্ষা মৌসুমে বেশি করে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। আমরা যদি পরিবেশটাকে ভালো রাখি, তহলে পরিবেশও আমাদের ভালো রাখবে। 

তিনি আরো বলেন, এই প্রেক্ষাপটে অভিযোজন হলো আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার কৌশল। শুধু টিকে থাকা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব জীবন গড়ে তোলা। আর এই অভিযোজনে তরুণদের অঅংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র একটি মেলা নয়, এটি একধরনের সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন। এই মেলার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কিভাবে ব্যক্তি, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে আমরা সবাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারি। আসুন সবাই মিলে শপথ করি- পরিবেশ রক্ষা করব, সচেতন থাকব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলব।

ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ’র জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ইয়ুথনেট গ্লোবাল’র সদস্য হুমায়রা আহমেদ জেবার পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শরাফ উদ্দিন। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট’র অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান, সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান মিয়া এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বাবুল। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন স্কাউট সদস্য ইরফান জাহান জোহান, পবিত্র গীতা পাঠ করেন ইয়ুথনেট গ্লোবাল’র মৌলভীবাজার জেলা কো-অর্ডিনেটর ঐশী দেব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইয়ুথনেট গ্লোবালের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট সমন্বয়কারী নাজমুল নাহিদ। প্রকল্প পরিচিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ’র সিলেটের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আতিকুর রহমান। 

এ সময় ফিতা কেটে এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

এরপর তারা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। 

দু’দিনব্যাপী জলবায়ু মেলার সমাপ্তি হবে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল)। এ দিন বিকেল ৩টায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী।