কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সিলেটের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। এসব নেতা বর্তমানে ভারত, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। বিদেশে অবস্থানকারী নেতাদের অনেকে নিয়মিত কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, রয়েছেন ‘এক্টিভ’।
এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন প্রথম আলো পত্রিকা।
পত্রিকাটির প্রতিবেদন উল্লেখ- পলাতক নেতারা বলেন, সিলেটের শীর্ষ নেতাদের অল্প কয়েকজন দেশে আছেন। বাকিরা বিদেশে। তবে মধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা এখনো দেশেই আত্মগোপনে আছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে চলে যান। রোববার দিবাগত রাতে তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী দেশের বাইরে আছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ নেতা-কর্মী দেশেই আছেন। দেশে থেকেই তাঁরা নীরবে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন। তবে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই তাঁরা একযোগে দেশে ফিরবেন।
কোন নেতা কোথায় :
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশ ছেড়েছেন। তিনি ঢাকা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পৌঁছান।
৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়ে সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁরা কলকাতা, শিলংসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। কলকাতায় আছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল) এবং সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।
দলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতে আছেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস (মিঠু), সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস (অনিক) প্রমুখ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেটের অনেক নেতা যুক্তরাজ্যে চলে যান। তাঁদের মধ্যে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী আছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানও যুক্তরাজ্যে আছেন। এই তিন নেতা ‘যুক্তরাজ্যের নাগরিক’ বলে একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে।
তবে সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক নন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। গত ৫ আগস্টের পর তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার বিপাকে পড়া নেতা-কর্মীদের আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।
যুক্তরাজ্যে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা।
এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও আরমান আহমদ, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমদ, যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) শফিউল আলম যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ :
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যাঁরা দেশের বাইরে আছেন, তাঁরা দেশে একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, নাশকতার অভিযোগসহ হামলা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁদের।
তাঁদের দাবি, দেশে থাকা সিলেটের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা লীগের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই আত্মগোপনে আছেন। এর বাইরে হঠাৎ দেশে থাকা নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিদেশে আশ্রয় নেওয়া নেতাদের বেশির ভাগই ফেসবুকে দলের পক্ষে এবং দেশে সংঘটিত বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সরব আছেন।
দেশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দেশে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা হঠাৎ বিক্ষোভ মিছিল করছেন। তবে এ কর্মসূচি পালন করে পরে অনেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। ২ এপ্রিল সকালে নগরে ছাত্রলীগ মিছিল বের করায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিকেলেই সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীসহ পাঁচজন নেতার বাসায় হামলা হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে ওই নেতা অভিযোগ করেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেছে, বিদেশে অবস্থান নিলেও অনেক নেতা দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা দলীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন। বিশেষ করে সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দেশে-বিদেশে থাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি গত ঈদে কারাবন্দী নেতাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দেশে থেকে সংকটে পড়া নেতা-কর্মীদেরও নানাভাবে সহায়তা করছেন।
এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও রনজিত চন্দ্র সরকারও তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় সহায়তা করছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।