পাসপোর্ট পেতে দেরি, বিপাকে প্রবাসীরা

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :


দুনিয়ার দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের জন্য হাহাকার চলছে। বিশেষ করে শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোতে এই সংকট প্রকট। ইতালি, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় ভিসা নবায়ন বন্ধ, দেশে জরুরি কাজে ভ্রমণে আসতে না পারাসহ নানামুখী জটিলতায় দিনাতিপাত করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। 
   
মালয়েশিয়ায় এমআরপি পাসপোর্ট সেবা বন্ধ করায় রেমিট্যান্স শাটডাউনের ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন প্রবাসীরা। তারা তাদের ভোগান্তির বার্তা পাঠাচ্ছেন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। স্বৈরশাসনের নিষ্ঠুর হয়রানি আর স্ব স্ব দেশের কঠোর বিধি নিষেধের ঝুঁকি সত্ত্বেও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিঃশর্তভাবে সাপোর্ট দেয়া প্রবাসীদের বিষয়ে আগাগোড়ায় সংবেদনশীল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু কারিগরি কারণে তাদের পাসপোর্ট সমস্যার চটজলদি সমাধান অসম্ভব। একদিকে প্রবাসীদের কান্না অন্যদিকে তাদের প্রতি দায় থেকে নড়েচড়ে বসেছে সরকার।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংকটটির একটি অন্তর্বর্তী সমাধান বের করতে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জরুরি বৈঠক  বসেছিলেন পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩ উপদেষ্টা। সঙ্গে ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের ৯ কর্মকর্তা। সেগুনবাগিচায় অনুষ্ঠিত ওয়ে-আউট খোঁজার ওই জরুরি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাসপোর্ট অধিদপ্তর জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে ৩ লাখ পাসপোর্ট বুক সংগ্রহের কথা জানিয়েছে। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, প্যান্ডিং ১ লাখ ৯০ হাজার পাসপোর্টের একটি বড় অংশ ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্য বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে  পৌঁছানো সম্ভব হবে। বাকিটা আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছানো হবে বলে জানানো হয়। 

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা ৩ উপদেষ্টাকে এই বলে আশ্বস্ত করেছেন, ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি  মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট সেবা চালু রাখতে এমআরপি বই এবং লেমিনেশন ফয়েল আমদানিতে নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বৃটেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচআইডি সিআইডি লিমিটেড থেকে এমআরপি বই এবং লেমিনেশন ফয়েল আমদানি করা হচ্ছে। আগেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে একই জিনিস আমদানি করেছিল সরকার। এ দফায় সর্বমোট ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বই এবং ১৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানি করা যাচ্ছে।

বৈঠকে জানানো হয়, বিদেশে বাংলাদেশের ৮০টি মিশন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু আছে। বাকি ৩৫টি মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু করা হবে পর্যায়ক্রমে। ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা পূরণে ২০২৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এমআরপি চালু থাকবে। নতুন বুক সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত  সংকট থাকবে বলে আশঙ্কা করা হয়। স্মরণ করা যায়, ১৫ লাখ এমআরপি বই এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানির জন্য বিগত সরকারের আমলে উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু তখন সরকার যে গুণের ও মানের এমআরপি বই ও ফয়েল চেয়েছিল, নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের দেয়া স্পেসিফিকেশন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না থাকায় সেই দরপত্র কার্যক্রম বাতিল করা হয়। সংকটটা এ কারণে ঘনীভূত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মূল রিপোর্ট : মানবজমিন