কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জমিয়ত সভাপতি মাওলানা শায়েখ জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন জমিয়তের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রউফ ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদি, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা তফাজ্জল হক আজিজ, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা লোকমান মাযহারী, ড. শোয়াইব আহমদ, মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী,মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়ঘরী,মুফতি নাসির উদ্দীন খান, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি বশিরুল হাসান খাদিমানী, মুফতি নুর মোহাম্মদ কাসেমী, মাওলানা নজরুল ইসলাম ও মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী প্রমুখ।
কাউন্সিলে ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো-
১. ফ্যাসিবাদী আমলে শাপলা চত্বরে গণহত্যা, মোদি বিরোধী আন্দোলনে হত্যা, পিলখানা হত্যা ও জুলাইবিপ্লবের গণহত্যাসহ বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
২. জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যে এক দফার লড়াই আমরা করেছিলাম, সেটা ছিল মূলত ফ্যাসিবাদের বা স্বৈরাচারের পতন এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একটি অর্জিত হয়েছে, আরেকটি অর্জনের পথে আছে। সুতরাং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রদানের জন্য আজকের কাউন্সিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
৩. সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবনায় কিছু বিতর্কিত বিষয় স্থান পেয়েছে বলে মনে করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতিত বহুত্ববাদ যুক্ত করাকে জমিয়ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। এই প্রস্তাবনা বাতিল করে আল্লাহর ওপর পূর্ণবিশ্বাস ও আস্থা পুনরায় বহাল করতে হবে।
৪. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে; যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা প্রদানের কথাবলে আল্লাহর বিধানের সাথে তামাশা করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নারীনীতিমালার নামে এসব বিতর্কিত বিষয়গুলোকে বারবার সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছিলো, কিন্তু জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ ইসলামপ্রিয় জনতার তীব্র প্রতিবাদের কারণে তা, বাস্তবায়িত হতে পারেনি। আজকের এ কাউন্সিল অধিবেশন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এবিতর্কিত প্রস্তাবনা বাতিলসহ পুরো কমিশন বাতিলের জোর দাববি জানাচ্ছে।
৫. ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যা শুধু ফিলিস্তিনের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্বমুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে জাতিসংঘকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে। মুসলিমবিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না। সুতরাং বাংলাদেশসহ মুসলমান প্রধান দেশগুলোকে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং ‘নিপীড়িত’ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগকেও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য আজকের এ অধিবেশন জোর দাবি জানাচ্ছে।
৬. পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে মুসলমানদের ওপর বারবার নির্যাতনের কাহিনী ঘটছে,মসজিদ-মাদরাসাসহ মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনায় বারবার আঘাত হানা হচ্ছে, বিশেষ করে দেশটির পার্লামেন্টে সম্প্রতি যে ওয়াকফ আইন সংশোধনী পাস হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ভারতে মুসলমানদের কোনো উপাশনালয় থাকবে না।সুতরাং জমিয়তের আজকের এ অধিবেশন এ ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল বাতিল করতে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানানোর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানাচ্ছে।
৭. আমাদের প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরী হয়েছে,দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধযুদ্ধভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এজন্য ভারত ও পাকিস্তানকে পরষ্পরের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আরো সংযত হওয়া ও আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসার জন্য আজকের কাউন্সিল বিনীতভাবে আহবান করছে।