জমিয়তের আগমনী ও বিদায়ী নেতৃত্ব

হাবীব নূহ >>

১.
তিনি ত্যাগ স্বীকার করে তাঁর মর্যাদার পদ ছেড়ে যেতে যেতে তাঁর خطاب الوداع বা Farewell speech -এ উদারতার সাথে বললেন—
“আমি মনে করছি নতুনদের কাছে নেতৃত্ব গেলে দ্বীনের কার্যক্রম আরো বেগবান হবে।”

তিনি "None other than" শায়খ জিয়া উদ্দিন হাফিযাহুল্লাহ।

তাঁর সাথে আমার সম্মুখ মোলাক্বাত কখনো ‘হয়তো’ হয়নি।তাঁর সান্নিধ্য লাভে আমি ধন্য হয়নি।সে সৌভাগ্য আমার এখনো হয়নি।

‘হয়তো’ শব্দটি উপরে এজন্য এড করলাম কারণ কিশোর বয়সে সাক্ষাৎ হলেও হতে পারে, তখন জ্বিহালাত হেতু এসব শ্রদ্ধেয়দের মোলাক্বাতে আগ্রহ ছিলো না।তবে এমনিতেই চিনা/অচেনা এবং জানা/অজানা অগণিত উলামা আর মাশায়েখকে শিশু সময় থেকে দেখে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম—আমাদের বাড়ির ঐতিহ্যের কারণে।তখনকার সময়ে সিলেট শহরে উলামা-ঘাঁটি হিসেবে যে কয়টি উল্লেখযোগ্য বাড়ি পরিচিত ছিল, এসবের শীর্ষে ছিল আমাদের বাড়ি।আমাদের নীড় যেন তাঁদের junction ছিল।

মুলাক্বাত হোক বা না হোক, সাগ্রহ সাক্ষাৎ অথবা অনাগ্রহী মুলাকাত যাইহোক, আমারা التربية الأسرية বা পারিবারিক সংস্কৃতি থেকে পেয়েছি শ্রদ্ধেয়দের প্রতি ইতিবাচক অনুভূতি পোষণ করতে, তাঁদের মত ও পথ আমাদের থেকে ভিন্ন হলেও।

তাইতো, সিলেটের কিংবদন্তি নাজিম সাবের গতকালের বিদায়ী বা "goodbye speech" তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার উন্নতি ঘটিয়েছে।
তাঁর এই বাক্যটিও "So touching" ছিলো-
“আপনাদেরকে আল্লাহর হিফাযতে সোপর্দ করে যাচ্ছি। আল্লাহ যেন আপনাদের নেগাহবান (নিগাবান) হোন।

২.
বিগত জানুয়ারিতে সিলেট কানাইঘাট মাদরাসার জলসার স্টেজে শায়খুল হাদীস উবায়দুল্লাহ ফারুক হাফিযাহুল্লাহর সাথে দেখা হলে আমি হাত বাড়ালাম মুসাফাহার জন‍্য, তিনিও মুসাফাহা দিয়ে তাঁর ঔদার্য (Generosity) দেখালেন।পাশে থেকে কেউ একজন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার নাম বললেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন—সোনার পাড়ার নাকি? কাছে থাকা শায়খুল হাদীস শায়খ আহমাদ (চিল্লার হুজুর) হাফিযাহুল্লাহ, সরস-আমোদ করে বললেন—জ্বী! তিনি সোনার পাড়ার আর আমি রুপা পাড়ার।শায়খুল হাদীস হাফিযাহুল্লাহ তখন আমাকে মুআনাকায় টেনে নিলেন।তাঁর এই দাক্ষিণ্য এবং recognition আমার কাছে ভালো লাগার ছিলো।

আশাকরি তাঁদের এই মহানুভবতা জাতীয় পর্যায়ে আরো বিস্তৃত হবে বিশেষ করে like-minded Islamic parties অথবা allied political parties এর সাথে।

৩.
শতাব্দী প্রাচীন জমিয়ত স্বমহিমায় ফিরে আসুক,সচেতন আলিমরা এখনো হয়তো তা কামনা করেন।

জমিয়ত যে শুধু প্রাচীন, তা নয় বরং জামায়াতে ইসলামীর মতো উপমহাদেশের অনেক দেশে জমিয়তের শিকড় বেশ আগে থেকেই প্রোথিত আছে।যদিও প্রতিটি দেশে তাদের পথ ও পন্থা হয়তো ভিন্ন।
দেশে ইসলামী দলগুলো যখন বহুধা বিভক্ত আছে এবং হয়তোবা থাকবেই, তাই জমিয়তও প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যেন ভালো করুক—সচেতনরা সেটিও হয়তো কামনা করেন।

কারণ ঐতিহ্য কেউ কামায় আবার কেউ হারায়।

পৃথিবী এটি দেখে অভ‍্যস্ত যে তুলনামূলক অনেক নতুনরা ঐতিহ্য তৈরি করছে আবার অনেক ঐতিহ্যবাহীরা অর্বাচীনের ভূমিকা পালন করছে।


লেখক পরিচিতি : 
চেয়ারম্যান : নাসিহা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
সি.ই.ও : নাসিহা ফাউন্ডেশন বিডি, ইংল্যান্ড
উপদেষ্টা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইংল্যান্ড
সিনিয়র সহসভাপতি, হেফাজতে ইসলাম, ইংল্যান্ড