১৭ বছরে দেশে আসছেন সিলেটি কন্যা জুবাইদা

  • নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আগামী মঙ্গলবার (৬ মে) লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন সিলেটি কন্যা; ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান। দীর্ঘদিন পর তাঁর দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে সিলেটসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরা একদিকে যেমন উজ্জীবিত-উৎফুল্ল, তেমনি আবেগাপ্লুতও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, দীর্ঘদিন পরে ডা. জুবাইদার আগমন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা বিশেষ আগ্রহ আসবে। তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করলে তা অবশ্যই রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা তৈরি করবে। আর রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও দেশে তার উপস্থিতিটাই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। জানা গেছে, ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকায় এক থেকে দুই মাস অবস্থান করতে পারেন। এ সময় তিনি আপাতত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। মূলত মা ও শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটাবেন, তাদের যত্ন নেবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ডা. জুবাইদা রহমান শুধু জিয়া পরিবারের একজন সদস্য তাই নয়, উনার বাবাও এ দেশে প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটা সেকশনের প্রধান ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন। তবে কোনো অপরাধ না করেও শুধু ফ্যাসিবাদের আক্রোশের কারণে ডা. জুবাইদা এতদিন স্বদেশে ফিরতে পারেননি।

তিনি বলেন, যখন কোনো পাখিকে খাঁচা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন তার মধ্যে ওড়ার শক্তি যতটা থাকে, প্রফুল্লতাও থাকে, এর সঙ্গে অনন্তকাল উড়ে চলার একটা স্পৃহাও জাগে। সব কিছু জুবাইদা রহমানের মধ্যে এখন বিদ্যমান। বিদ্যমান বলেই এতদিন পরে হলেও তিনি দেশে আসতে যাচ্ছেন। এতে তিনি যেমন আনন্দিত-উৎফুল্ল, বিএনপির নেতাকর্মীরাও তেমনি উৎফুল্ল হয়েছেন। একই সঙ্গে তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্যও তারা অপেক্ষা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসবেন কি না, সেটা সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত কিংবা তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যদি তিনি আসেন, তাহলে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী মানুষ দারুণ খুশি হবে। সেক্ষেত্রে নেতৃত্বের যে গুণাবলি জিয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরাজমান, তার সঙ্গে আরও একটি নতুন উপাদান যুক্ত হবে, বিএনপির নামের সঙ্গেও যুক্ত হবে সম্মানের আরেকটি পালক। এমনটা হলে এর মধ্য দিয়ে বিএনপি এ দেশের রাজনীতিতে তারুণ্যকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে, যুবকদের আরও বেশি এই দলে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাবে।

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে যান জুবাইদা রহমান। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জুবাইদা রহমান এতদিন দেশে ফিরতে পারেননি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেমন ওয়ান-ইলেভেন ও আওয়ামী সরকারের চক্রান্ত ছিল, মামলা ছিল—তার সহধর্মিণীও এর বাইরে ছিলেন না। দুদকের এক মামলায় ২০২৩ সালে জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়। এরপর অবশেষে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন তিনি।

ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফেরার পর জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে তার জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে গত বুধবার পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকায় অবস্থানকালে ধানমন্ডিতে তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন। জিয়া পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে ডা. জুবাইদার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। সে কারণে তার ঢাকাস্থ বাসায় অবস্থানকালীন এবং যাতায়াতের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রত্যাশিত চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে—একজন সশস্ত্র গানম্যান নিয়োগ; গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা; বাসায় পুলিশি পাহারা এবং বাসার প্রবেশপথে আর্চওয়ে স্থাপন।

জানা গেছে, দেশে ফিরে জুবাইদা রহমান প্রথমত শাশুড়ি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যাবেন। পরে তিনি ধানমন্ডিতে তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন।

জুবাইদা রহমানের জন্ম সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। তিনি মরহুম রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।

জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জুবাইদা রহমান রাজনীতি সচেতন থাকলেও এখনো সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে স্বামী তারেক রহমানের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে গেছেন তিনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় বাবা মাহবুব আলীর মৃত্যুবার্ষিকী এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রামসহ দু-একটি সামাজিক প্রোগ্রামে তাকে দেখা গেছে। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।