কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সোমবার (১২ মে) রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকাল পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে আলোচিত ধর্ষণ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, লাশ উদ্ধার, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু, খুন ও ৩ চাঁদাবাজির অভিযোগে ৩ জনকে কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ঘটেছে।
এমসির ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় একজনের সাক্ষ্য প্রদান :
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম অবশেষে শুরু হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে সব আসামির উপস্থিতিতে সুনামগঞ্জের হৃদয় পারভেজ নামে এক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক স্বপন কুমার দাস পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য্য করেন।
এর আগে উচ্চ আদালতের আদেশের পর মামলার নথিপত্র দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসার পর মঙ্গলবার (৬ মে) আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল হোসেন। তিনি জানান, সব আসামির উপস্থিতি হৃদয় নামের একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
রিকশা ব্যাটারিতে চার্জ দিতে গিয়ে একজনের প্রাণহানি :
সিলেটের জকিগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিপন বিশ্বাস (২১) এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১০টার দিকে জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়নের কেরাইয়া গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে।
শিপন একই এলাকার বাবুল বিশ্বাসের ছেলে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ থেকে খুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন শিপন। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জৈন্তাপুরে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার :
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা ৪নং বাংলাবাজার এলাকা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। তার বাড়ি সিলেটের গোয়ালাবাজার এলাকায় বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকাল ৩টার দিকে বাংলাবাজার মেঘালয় হোটেলের পাশ থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার জৈন্তাপুর উপজেলা ৪নং বাংলাবাজারের মেঘালয় হোটেলের পাশে এক মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা জৈন্তাপুর থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে ৩টার দিকে পুলিশ হোটেলের পাশ থেকে লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়,তিনি দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থতায় ভোগছেন।
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন- বাংলাবাজার এলাকা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ শনাক্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল ও কলেজের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।সিলেট ভ্রমণ প্যাকেজ
ছাতকে প্রতিপক্ষের বৃদ্ধ খুন :
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক বৃদ্ধ নিহত হন। সোমবার (১২ মে) রাতে সাড়ে ১০টার দিকে পিডিবি বিদ্যুতের খুটিতে লাইন সংযোগকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও কিলঘুষির ঘটনা ঘটে। কিলঘুষির এক পর্যায়ে এক পক্ষের বৃদ্ধ গুরুতর আহত হন। আহতাবস্থায় উদ্ধার করে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত বৃদ্ধ ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দিঘলী বেরাজপুর গ্রামের মৃত মুসলিম আলীর ছেলে সোনাফর আলী (৭৫)।
জানা যায়, দিঘলী বেরাজপুর গ্রামের রাস্তার পাশ দিয়ে পিডিবি বিদ্যুতের লাইন বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু ওই লাইনে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। তারে লাঠি দ্বারা আঘাত করলে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়। সোমবার সন্ধ্যায় পাশের বাড়ির কয়েছ মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম বিদ্যুৎের লাইনে লাঠি দ্বারা আঘাত করেন। এসময় মৃত মসলিম আলীর ছেলে সোনাফর আলী দেখেন তার ঘরে বিদ্যুৎ ছিল কিন্তু লাইনে আঘাত করায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ নিয়ে সেলিনার সাথে কথা কাটাকাটি হয় সোনাফর আলীর। সেলিনার পক্ষ নেয় তার স্বামীর চাচাতো ভাই ময়না মিয়ার ছেলে লেগুনা চালক তাজ উদ্দিন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ সালিশে বসেন। সালিশ চলাকালে দুই পক্ষ হঠাৎ উত্তেজিত হলে সালিশ ব্যক্তিরা তাদেরকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। এক পক্ষ ঘরে ফিরে দিলে অপর পক্ষের তাজ উদ্দিনরা সোনাফর আলীকে একা পেয়ে মাটিতে ফেলে উপর্যুপরি কিলঘুষি দিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে ওই সালিশ ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। মঙ্গলবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দাফন করা হয়েছে। এদিকে বৃদ্ধের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রাতেই হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাতে ছাতক থানাপুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এদিকে, নিহত সোনাফর আলীর ছেলে জায়েদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন- সালিশ ব্যক্তিদের কথায় তারা দুই ভাই বসতঘরে ফিরে যান। এসময় ময়না মিয়ার ছেলে স্ত্রী হত্যাকারি তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ৮-১০জনের একটি সংঘবদ্ধরা তার পিতাকে একা পেয়ে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি তার পিতা হত্যার বিচার চান।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, বৃদ্ধ নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাথর কোয়ারিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৩ জন কারাগারে :
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৩ জনকে আটকের পর কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
এর আগে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৭–৮ জনকে।
কানাইঘাট উপজেলার বাউরবাগ ২য় খণ্ডের মৃত তবারক আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩৭) মামলাটি দায়ের করেছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন- মাসুম, মইনুল ও জয়নাল আবেদীন- এ ৩ জন একটি চক্র গড়ে তুলেছেন এবং পাথর কোয়ারিতে চাঁদাবাজি কর আসছেন। সোমবারও (১২ মে) তারা চাঁদাবাজি করতে গেলে মোহাম্মদ আলী পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে আব্দুল্লাহ, সাইফ ও তায়েফ উদ্দিন নামের তিনজনকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে চাঁদার ৪ হাজার ৭৫০ টাকা জব্দ করে পুলিশ।
মঙ্গলবার তাদের আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম।