গতি নেই সিলেট-ঢাকা ছয় লেনের কাজে

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নিত করার কাজ ধীরগতিতে চলার কারণে চালক-যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। জেলার ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর থেকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ দীর্ঘদিন আগের হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এতে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে আর ঘটছে দুর্ঘটনা।

মহাসড়কের পাশে সরকারী জায়গার উপর স্থাপনাগুলো অপসারণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-মালিকদের পুনর্বাসন কাজ প্রায় শেষের দিকে। মালিকানাধীন জায়গার কিছু অংশের অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেও বেশিরভাগ ভূমি অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রিতায় ঝুলে আছে মহাসড়কের ধারাবাহিক কাজ। 

অনেকে মনে করছেন, মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্টদের সাথে উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা যুক্ত থাকলে তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজের দক্ষতায় উন্নয়ন কাজ আরো টেকসই হতো।

জানা গেছে, মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার সীমানায় শেরপুর থেকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ২৩ কিলোমিটার রাস্তা। এই অংশে প্রায় দুই ডজন ব্রীজ ও কালভার্টের আংশিক কাজ দৃশ্যমান করা হয়েছে। বিগত সময়ে মহাসড়কের যে সকল স্থানে ব্রিজ- কালভার্ট ছিল সে সকল স্থানেই পুনরায় নতুন করে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। সে সময় মহাসড়কের দু'পাশে ফসলি জমিসহ পানির নালাও ছিল।

কিন্তু পরবর্তীতে অনেক কালভার্টের আশে পাশে মানুষের প্রয়োজনে কৃষি জমি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে বসত-বাড়ি, মার্কেট, ফিলিং স্টেশনসহ বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা। এ অবস্থায় এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানি মহাসড়কের পূর্ব পাশে আটকা পড়ে বন্যার সৃষ্টি করে। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের কালভার্ট নির্মাণের কারণে পানি আটকা পড়ে মহাসড়কের পূর্ব পাশে বন্যার সৃষ্টি হয়।

দেখা যায়, দুই ডজন কালভার্টের মধ্যে বেশ কয়েকটি কালভার্টের পূর্ব পশ্চিমে পানি নিষ্কাশনের নালা নেই। দুই পাশেই রয়েছে বাসা-বাড়ি। একসময় এসব কালভার্ট দিয়ে পানি চলাচল করলেও এখন ভিটা-বাড়ি, মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরি এবং কোনো পানির নালা না থাকায় বর্তমানে নির্মাণাধীন অনেক কালভার্ট কোন উপকারে আসছে না। এছাড়া ব্রিজ-কালভার্টগুলোর গভীরতা কম থাকায় বন্যার সময় ভোগান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দয়ামীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দিন বলেন, অধিকাংশ কালভার্ট ছোট এবং গভীরতা দেওয়া হচ্ছে কম। এতে জলাবদ্ধতা হতে পারে। বন্যার সময় এলাকাবাসী ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক উদয়ন চক্রবর্তী বলেন, জায়গা অধিগ্রহণ হলে আমাদের জানানো হয়। যেগুলো সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে কাজ চলমান রয়েছে। ব্রিজ-কালভার্টের সামনা ধেবে যাবে কি না, সে জন্য আমাদের টেস্টিং চলছে। ব্রিজ-কালভার্টগুলো ডিজাইনমত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি ।

সিলেট অংশের মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেবাশিষ রায় বলেন, এখানে তিনটি কন্ট্রাকশন কোম্পানী কাজ করছে। ব্রিজ-কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। যেসব স্থানে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে, সে সব স্থানে আগেই করা ছিল। বর্তমানে যেখানে প্রয়োজন নেই, সে স্থানে ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। যেখানে পানির প্রবাহে বাধা হবে সেখানে জমি অধিগ্রহণ করে পানি নিষ্কাশনের পথ তৈরি করে দেয়া হবে। জমি অধিগ্রহণের কাজ বিগত সময়ের তুলনায় কাজের গতিশীলতা বেড়েছে। চলতি বছরের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হলে ৩ বছরের মধ্যে মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান- ব্রিজ-কালভার্টের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন।

চলতি বছরের মধ্যে মহাসড়কের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জেলা প্রশাসক।

(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)