কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
মেক্সিকোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন- প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল সিলেট। এ অঞ্চলের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছেন। বছরের দেশের ২৫-২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটের মানুষের কাছ থেকে। সরকারের অর্থনীতিতে বড় যোগান এই রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের। হিসাবমতে- ২০২৩ ও ২৪; এই ২ বছরে সিলেটি প্রবাসীরা ৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে।
শনিবার (২৪ মে) সিলেটে প্রবাসী ও তাদের সন্তান এবং নিহত প্রবাসীদের পরিবারকে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ তার অধিকার আদায়ের সোচ্চার হয়েছে। পলাতকরা যদি মনে করেন একটি সময় এসেছে এখন ঝোঁপ বুঝে কোপ মারবেন; এটা আর হবে না। তাদের প্রতিরোধে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
শনিবার বিকালে সিলেট মহানগরের সুবিদবাজারস্থ পিটিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৫ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ব্যারিস্টার মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষে অতিথি ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খান মো. রেজা-উন-নবী, সিলেট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার (অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা) এবং সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭টি ক্যাটগরিতে সিলেট বিভাগের ১৫৪ জন প্রবাসীর পরিবার মোট ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার বিকালে সিলেট মহানগরের সুবিদবাজারস্থ প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউট (পিটিআই) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগীদের হাতে চেক হস্তান্তর করেন অতিথিবৃন্দ।
সূত্র জানায়, আজকের অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের মেধাবী সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রবাসে মৃতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান, বীমা সুবিধা ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করা হয়।
৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন ৩৬ জন। অনুদানের পরিমাণ ১০ লাখ ৪২ হাজার টাকা। শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থী এই অনুদান গ্রহণ করেন এসএসসি ক্যাটাগরিতে একজন শিক্ষার্থী ২৭ হাজার ৫শ টাকা হিসেবে দুই বছরে ৫৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
এইচএসসি পর্যায়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বিএ/অনার্সে পড়াশোনা বাবদ প্রতি বছর ৩৪ হাজার টাকা অধ্যয়নরত সময়ের জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
এদিকে, প্রতিবন্ধী ভাতা ক্যাটাগরিতে ২০ জন প্রবাসীর পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে। অনুদানের পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একজন প্রবাসীর প্রতিবন্ধী সন্তানকে বছরে ১২ হাজার টাকা হারে ৫ বছরে সর্বমোট ৬০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
আর্থিক অনুদান ক্যাটাগরিতে প্রবাসে মৃত কর্মীর ৬৩টি পরিবারকে ৩ লাখ টাকা হিসেবে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে।
মূলত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড নিজস্ব তহবিল থেকে প্রবাসে মৃত কর্মীদের আর্থিক এই অনুদান দিয়েছে।
মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রবাসী কর্মীর ৬টি পরিবারকে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ দেয়া হয়েছে। প্রবাসে কর্মরত কোনো কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায়কৃত ব্লাডমানি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
মৃত্যুজনিত বীমা দাবি পরিশোধ ক্যাটাগরিতে শনিবার ২০টি পরিবারকে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। মূলত ২০২৩ সাল হতে বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ করে যে সব কর্মী বিদেশ গমন করে তাদের নিকট হতে জীবন বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে ১ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়। উক্ত প্রিমিয়ামের বিনিময়ে ৫ বছরের মধ্যে কোনো প্রবাসী কর্মী মারা গেলে তার পরিবার ১০ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে বিদেশ গমনে ৬ মাসের মধ্যে ফেরত আসা ৬ জন কর্মীকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। ২০২৩ সাল থেকে বিএমইটি ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর যেসব কর্মী ৬ মাসের মধ্যে ফেরত আসে তাকে মূলত ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে সিলেট বিভাগের ৬ জনকে এই অনুদান দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ক্যাটাগরি ছিলো বকেয়া বেতন। এই ক্যাটাগরিতে ৩ জন মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে ১৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। মূলত কোনো প্রবাসীকর্মী বিদেশে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয় তা দূতাবাসের মাধ্যমে আদায় করে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।