- কমিশনের রিপোর্ট
কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও র্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসির গুমকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। অনেকে প্রতিশোধের ভয় পাচ্ছেন, এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কাও করছেন।
কোনো বাহিনীর নাম উল্লেখ না করে গুম কমিশনের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কমিশনকে জানিয়েছেন, ‘স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন কেউ কমিশনের সামনে মুখ না খোলে।’
গুম কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়। গত সোমবার এ অধ্যায়টি গণমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর আগে গত ৪ জুন প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে গুম কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু নির্দিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার ভেতরে এখনো কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা না করার অপচেষ্টা চলছে। অভ্যন্তরীণভাবে কিছু গ্রুপ গড়ে উঠেছে যাদের কাজ কমিশনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সমন্বিত অবস্থান নেওয়া। কমিশনের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে ব্রিফিং ও ডিব্রিফিং সেশন আয়োজন করা হচ্ছে এমন খবর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাই বারবার কমিশনকে জানিয়েছেন।
ডিব্রিফিং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন- সামরিক বাহিনী, ব্যবসা, শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞান। সামরিক বাহিনীতে কোনো অভিযান বা মিশনের পর ডিব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সৈনিকদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়, যা ভবিষ্যতে একই ধরনের পরিস্থিতিতে আরো ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য অনেকের সঙ্গে আলোচনায় দেখা গেছে তারা গভীরভাবে ভীত। তবে তাদের ভয় কমিশন বা এর জবাবদিহির ম্যান্ডেটের কারণে নয়, তাদের ভয় নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকেই। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, ‘একজন সৈনিক প্রথমে শুধু একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে রাজি হয়েছিলেন, কারণ তিনি এতটাই ভীত ছিলেন যে, কমিশনের কোনো সদস্যকে তার কণ্ঠ পর্যন্ত শোনাতে চাননি। শুধু বারবার আশ্বস্ত করার পরেই তিনি অবশেষে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করেন। এটি বাহিনীর অভ্যন্তরে ভয়ের গভীরতাকেই প্রতিফলিত করে।’
একজন সাক্ষাৎদাতা জানান, তার ঊর্ধ্বতনরা তাকে বলে দেন নিজের কার্যকলাপ স্বীকার করলেও, অন্য কোনো কর্মকর্তার নাম যেন না বলেন বা কারো কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু না বলেন। এমনো দেখা গেছে যে, যেসব কর্মকর্তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য কমিশনে ডাকা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আইনজীবী পাঠানো হয়েছে, যদিও আইনে এমন কোনো বিধান নেই। এক সামরিক কর্মকর্তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কেন আইনজীবী নিয়ে এসেছেন, তিনি জানান এটি তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নয়, বরং ‘হেডকোয়াটার্স’ এর নির্দেশ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যারা সাহস করে প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ভেঙে কমিশনের সঙ্গে কথা বলছেন, তাদের ওপরে ব্যক্তিগত নয়, মূলত প্রাতিষ্ঠানিক চাপ এসেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে র্যাব ইন্টেলিজেন্সের একজন সাবেক কর্মকর্তা কমিশনকে ফোনে লিখে পাঠিয়েছিলেন যে তিনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে তার নাম যেন প্রকাশ করা না হয়। প্রকাশ করা হলে সেনাবাহিনী তাকে বরখাস্ত করবে এবং গ্রেপ্তার করবে।
(মূল রিপোর্ট : আমার দেশ)