কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেটের মেজরটিলায় ৪৫ দিনের শিশুসন্তান হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত বাবাকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই শিশুর মা ঝুমা বেগম। শুক্রবার (২৭ জুন) মামলাটি দায়ের করা হয়।
এ তথ্য কওমি কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
তিনি কওমি কণ্ঠকে জানান- অভিযুক্ত বাবা এখনো হাসপাতালে। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। আসামি ওসমানী হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন। তবে তাকে স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) বিকালে সিলেটের শাহপরাণ থানাধীন মেজরটিলা (ইসলামপুর) বাজারসংলগ্ন কোরেশী ভিলা ১৮/এ-এর ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয় ৪৫ দিন বয়েসি শিশু ইনায়া রহমান। সে ওই বাসার ভাড়াটে আতিকুর রহমান ও ঝুমা বেগম দম্পতির কন্যা।
জানা যায়, ওই দিন দুপুরে খাবার খেয়ে স্ত্রী ও শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আতিকুর রহমান। বিকেলের দিকে হঠাৎ তাঁদের ঘর থেকে চিৎকার শোনা গেলে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে দেখেন- আতিকুর রহমান রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন এবং তাঁর দুই মাসের কন্যা ইনায়া রহমানের গলা কাটা। তাদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। আর গুরুতর আহত আতিকুর রহমানকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালের ৫ম তলায় সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে স্থানান্তর করা হয় আইসিআই-তে।
অপরদিকে, ইনায়ার মা ঝুমা বেগওও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন- বেলা ১১টার দিকে ইয়ানার বাবা গাড়ি রেখে ঘরে এসে বলেন কিছুটা অসুস্থবোধ করছেন। জোহরের নামাজ পড়ে খাওয়া শেষ করে আমরা ঘুমিয়ে যাই। আসরের আজানের কিছুক্ষণ আগে মেয়েটি কান্না করছিল। এসময় বাচ্চার বাবা আমার মেয়েকে শান্তনা দিতে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটছিলেন। কিছুসময় পরে তিনি (স্বামী) বাথরুমে যান এবং এসে আমাতেকে ডাকেন। এসময় আমি ঘুম ঘুম চোখে থাকিয়ে দেখি আমার স্বামীর গলা রক্তাক্ত। পরে দ্রুত উঠে গিয়ে দেখি আমার মেয়েরও গলাকাটা। এসময় আমি আমার স্বামীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ‘আমার মাথায় কাজ করছে না, আমি কী করেছি জানি না’। পরে আমার চিৎকারে আশপাশের মানুষজন এসে আমাদের উদ্ধার করেন।
এদিকে, ঘটনার পরদিন নিজের শিশুকন্যাকে গলা কেটে হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন বাবা আতিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসএমপি’র মিডিয়া অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তথ্যটি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আতিকুর রহমানের জবানবন্দি ও তার স্ত্রীর বক্তব্য এবং অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে- শিশুটির পিতাই তাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা এবং পরে নিজেও গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুর রহমান পুলিশকে জানান- মাথাব্যথার কারণে তার মাথায় হঠাৎ কী যেন হয়েছিল বুঝতে পারেননি।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি জব্দ করা হয়।
অভিযুক্ত আতিকুর রহমান সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার টংঘর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে।